লোকমানের ‘মধুর হাঁড়ি’ ছিল ক্রিকেট বোর্ড

জাতীয় দলের হোম সিরিজ ও বিপিএলের গ্রাউন্ডস রাইটস কে-স্পোর্টসের কাছে। বিসিবি গ্রাউন্ডস কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার হাত ধরে ক্রিকেটের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলে এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৭ সালের বিপিএলে কে স্পোর্টসের মাধ্যমেই গ্রাউন্ডসে এলইডি বোর্ডস সরবরাহ করেন লোকমান। এরপর থেকেই বিসিবিতে ‘এলইডি লোকমান’ নামে তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতেন খোদ কর্মকর্তারা।

প্রায় পাঁচ কোটি টাকায় বিপিএলের গ্রাউন্ডস রাইটস তিন বছরের জন্য কেনে কে-স্পোর্টস। ২০১৮ সালে লোকমানের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় দলের সিরিজের গ্রাউন্ডস রাইটস নেয় দুই বছরের জন্য। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট বিসিবির সঙ্গে চুক্তি আছে কে-স্পোর্টসের।
এ সময়ে ছয়টি আন্তর্জাতিক সিরিজ হওয়ার কথা। এই সিরিজগুলোর জন্য বিসিবির সঙ্গে কে স্পোর্টসের চুক্তি হয় ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া। এক বছর পেরিয়ে গেলেও কে-স্পোর্টসের কাছ থেকে বুধবার পর্যন্ত ব্যাংক গ্যারান্টি নেয়নি বিসিবি। এ ব্যাপারে বোর্ডের মার্কেটিং কমিটির চেয়ারম্যান শেখ সোহেলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে থাইল্যান্ড থেকে তিনি জানান, ব্যাংক গ্যারান্টির বিষয়টি তার জানা নেই।
একটা সময় ছিল, যখন চুক্তির স্বচ্ছতার খাতিরে স্পন্সর সংক্রান্ত সব তথ্যই সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করত বিসিবি। স্পন্সর ও টিভি রাইটস কত টাকায় বিক্রি হয়েছে এর কোনো কিছুই অজানা থাকত না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে স্পন্সর-সংক্রান্ত আর্থিক দিকগুলো গোপন বিষয় হয়ে গেছে। কে-স্পোর্টসের কাছে বিপিএল ও জাতীয় দলের গ্রাউন্ডস রাইস কত টাকায় বিক্রি হয়েছে তা গোপন রাখা হয়েছে। বিসিবির দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় দলের গ্রাউন্ডস রাউটসের চুক্তির টাকা বিসিবিকে দেয়নি কে স্পোর্টস।

ব্যাংক গ্যারান্টি না থাকায় তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে বোর্ডের মার্কেটিং কমিটির চেয়ারম্যান শেখ সোহেল বলেছেন, ‘বিসিবির টাকা কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আমি তো জানি, সব চুক্তিই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়। আমি জানি না, ব্যাংক গ্যারান্টি আছে কি নেই। যদি না থাকে, তাহলে দেশে ফেরার পর আমার প্রথম কাজই হবে ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়া এবং বকেয়া টাকা আদায় করা। ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে টাকা তুলে ফেলব।’

বিসিবি কর্মকর্তারা ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া চুক্তির বিষয়ে চুপ থাকলেও কে-স্পোর্টসের সিইও ফাহাদ করিম সমকালের কাছে স্বীকার করেন, জাতীয় দলের গ্রাউন্ডস রাইসের চুক্তির বিপরীতে কোনো ব্যাংক গ্যারান্টি দেননি তিনি। তবে একটা মোটা অঙ্কের টাকা বিসিবিকে পরিশোধ করেছেন বলে দাবি তার, ‘ব্যাংক গ্যারান্টি দিইনি এটা সত্যি; কিন্তু টাকা দিচ্ছি। গত বছর পর্যন্ত সব টাকা পরিশোধ করেছি। দুই কোটি টাকা দিয়েছি। হ্যাঁ, এ বছর কোনো টাকা দিইনি। সময়-সুযোগ করে পরিশোধ করে দেব।’ যদিও বিসিবির একাধিক পরিচালক সমকালকে জানান, কে স্পোর্টসের সঙ্গে চুক্তির সিংহভাগ টাকাই বকেয়া।

কয়েক বছর ধরে স্পন্সর-সংক্রান্ত সব চুক্তিই বিসিবির প্রভাবশালী পরিচালকরা করেছেন। তাদেরই একজন লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। কোনো এক রহস্যজনক কারণে বিসিবির গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে রাখা হয় তাকে। বিশেষ করে কেনাকাটা-সংক্রান্ত কমিটিগুলোতে। বর্তমান ফ্যাসিলিটিস বিভাগের চেয়ারম্যান তিনি। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলেরও সদস্য। বিসিবির যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাকে ছাড়া হয় না। এতে করে দিন দিন বিসিবিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন লোকমান।

বিসিবির একাধিক পরিচালক নাম গোপন রাখার শর্তে বলেছেন, কোটি কোটি টাকার মাটি সরবরাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন লোকমান। অভিযোগ আছে, বিসিবির মাঠ সংস্কারের মাটি ভেড়িবাঁধের কাছে নিজস্ব জমি ভরাটের কাজে ব্যবহার করেছেন বিএনপির সাবেক এ নেতা।

আরও সংবাদ