আমেরিকা আ.লীগকেও কঠিন বার্তা দিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী

আমেরিকায় আওয়ামী লীগে চলছে সুনসান নীরবতা। সম্মেলন হয়নি, নতুন কমিটি হয়নি। কবে হবে—তা নিয়েও কারও কোনো ধারণা নেই। শেষ পর্যন্ত অবস্থা কোনদিকে মোড় নেবে, কারা প্রবাসেও দলের পরিচয় বহন করতে পারবেন, এ নিয়ে চলছে নানা কথাবার্তা। দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার যুক্তরাষ্ট্রে নেতা–কর্মীদের কঠিন বার্তাই দিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নিউইয়র্ক আগমন উপলক্ষে প্রতি বছরই সংবর্ধনার আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। ম্যানহাটনের নামীদামি হোটেলে এবারেও আয়োজন ছিল জমজমাট। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ দুই মাস আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এবার এ নিয়ে মারামারি হয়েছে। সহিংসতার জন্য মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদের তেমন কোনো করা অবস্থান না থাকলেও নিজেদের কোন্দলে আওয়ামী লীগেরই বদনামে হয়েছে।

জানা গেছে, সংবর্ধনা নিয়ে সব প্রস্তুতি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে সাক্ষাতের সুযোগ দেননি প্রধানমন্ত্রী। দলের নেতা-কর্মীরা প্রতিদিনই জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ভিড় করেছেন। জাতিসংঘের নানা কর্মসূচিতে যাওয়ার আসার পথে তাঁরা দেখা দেওয়ার কথা চেষ্টা করেছেন। এমনকি সংবর্ধনা সভায় মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কেউ ছিলেন না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিকে মঞ্চে নিয়েই তাঁর সফল সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাপক লোক সমাগম হলেও আওয়ামী লীগের উভয় গ্রুপের নেতা-কর্মীরা ছিলেন চুপচাপ।

জানা গেছে, ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার পর হোটেলের লবিতে ফেরার সময় বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি দেবেন। এর পর থেকেই উত্তেজনা অন্য মোড় নেয়। সিদ্দিকুর রহমানকে সরিয়ে আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রে হাল ধরার জন্য নতুন কেউ আসছেন এমন আভাস দেওয়া হয় নানা মহল থেকে। একপর্যায়ে কমিউনিটির পরিচিত মুখ জিয়া উদ্দিন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি হচ্ছেন, এমন সংবাদ দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো শুরু হয়। পরে জিয়া উদ্দিন বলেন, তাঁর সঙ্গে দলীয় উচ্চ পর্যায় থেকে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তিনি যখন মনে করবেন তখন কমিটি করবেন। এ নিয়ে যারা নিজেদের নানা পদ পদবিতে দেখছেন তাদের নিরাশ করে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে চেনেন, জানেন এবং নিজে সময়মতো কমিটি করবেন বলে জানিয়ে দেন। তিনি আগের কমিটি বাতিল করেননি বা স্থগিত করার কোনো ঘোষণা দেননি।

প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ত্যাগ করার পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নিজেদের ধাতস্থ করার চেষ্টা করছে। প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ‘নেত্রীর সতর্কবার্তা আমরা পেয়েছি। আমরা অনেক ভুলভ্রান্তি করেছি। সবকিছু ভুলে গিয়ে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই নতুন চেতনায় আমরা কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

দেশের নানা অঞ্চল থেকে আসা আওয়ামী লীগের নানা পর্যায়ের নেতা কর্মীদের সমাহার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে। দেশের যেকোনো জেলা বা বিভাগের কমিটি থেকে এ কমিটি সামাল দেওয়া এক দুরূহ ব্যাপার। অতীতে অনেকেই এ কাজে অসফল হয়েছেন। মারামারিও হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে শুরু থেকে সিলেট অঞ্চলের নেতা–কর্মীদের আধিক্য আওয়ামী লীগে। সিলেট অঞ্চল থেকে আসা প্রবাসীর সংখ্যা বেশি থাকার কারণেই গোড়ার দিকের কমিটিগুলোতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সিলেট অঞ্চল থেকেই ছিলেন। গত দুই দশকে অন্যান্য এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ব্যাপক আগমন ঘটেছে। নানা নেতার, নানা অনুসারী। এদের যুক্ত করে এখানে দল চালানো এখন খুবই জটিল মনে করছেন অনেকেই।

প্রধানমন্ত্রী এবারের সফরের সময় এখানে দলীয় নেতা–কর্মীদের জন্য কঠিন বার্তা দিয়ে গেছেন। নিজেদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে না পারলে অনেককেই দল থেকে সরে যেতে হবে। শেখ হাসিনা সময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি দেবেন এ প্রত্যাশা নিয়েই এখন কাজ করে যেতে হবে দলের এখানকার নেতা কর্মীদের।

আরও সংবাদ