প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে মন্ত্রণালয়

বেতনবৈষম্য নিরসনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন নিয়ে কঠোর অবস্থানে মন্ত্রণালয়। চাকরি বিধি ও মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা লঙ্ঘনকারী শিক্ষকদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে (ডিপিই-কে)। গতকাল আরো একটি চিঠি ইস্যু করতে বলা হয়েছে অধিদফতরকে (ডিপিই-কে)। সে চিঠিতে আগামী ২৩ অক্টোবর যারা অনুপস্থিত থাকবেন, তাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হবে। এ চিঠি আজই জারি করা হতে পারে। জেলা-উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের এ চিঠি বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হবে।

 

এ দিকে, প্রায় পক্ষকালব্যাপী সরকারি সফরে বিদেশ সফর শেষে গতকাল প্রত্যুষে ঢাকায় ফিরে দুপুরে প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন এবং মন্ত্রণালয়ের অন্য সব অতিরিক্ত সচিবদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন সচিব মো: আকরাম-আল-হোসেন মন্ত্রীর কক্ষে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর সচিব ডিপিইর মহাপরিচালককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন নিজ কক্ষে এসে।

 

মন্ত্রী-অতিরিক্ত সচিবদের সাথে বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষকদের গত ১৪ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি সম্পর্কে সচিবকে অবগত করানো হয়। সচিব আগামী ২৩ অক্টোবর শিক্ষকদের ঢাকায় মহাসমাবেশের বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন এবং এ ব্যাপারে আর কোনো ছাড় নয় বলে মন্তব্য করেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠক সূত্র জানান, মন্ত্রী এতে সম্মতি জানান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আজই জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে আরেকটি নির্দশনামূলক চিঠি পাঠানো হবে। তাতে, যারাই ঢাকায় মহাসমাবেশে যোগ দেবেন, তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগসহ রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশনা থাকবে বলে জানা গেছে।

 

মন্ত্রী-অতিরিক্ত সচিবের সাথে বৈঠক শেষে সচিব মো: আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনে যাওয়া শিক্ষকদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আমি বৈঠক করেছি-আলোচনা হয়েছে।’ সচিব আরো বলেন, ‘চিঠি দেয়া হবে, যারা সমাবেশে যাবে, তাদের ব্যাপারে কঠোরতম ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সচিব মো: আকরাম-আল-হোসেন আরো বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অর্থসচিবের সাথে কথা বলেছি এবং একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে অনেক দূর এগিয়েছি।’

 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব আকরাম-আল-হোসেন জানান, প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে সম্মত আলোচনার ভিত্তিতে নতুন গ্রেড অর্থাৎ প্রধান শিক্ষকদের ১১তম এবং সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১৩তম গ্রেডের প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। অর্থসচিবের সাথে আলোচনা হয়েছে সহকারী প্রধান শিক্ষকের একটি পদ সৃষ্টির ব্যাপারে। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সহসাই নতুন করে বেতনবৈষম্য নিরসনের প্রস্তাব পাঠানো হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য নিরসনে মন্ত্রণালয় বসে নেই।

 

শিক্ষকরা ২৩ অক্টোবরের ঢাকায় মহাসমাবেশ নিয়ে অনড় : বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবিতে টানা চার দিন ১ ঘণ্টা থেকে পর্যায়ক্রমে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের পর আগামী ২৩ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে শিক্ষক নেতারা জানান। প্রাথমিক শিক্ষকদের ১৪টি সংগঠন নিয়ে গঠিত মোর্চা ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে সব শিক্ষকরা এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতারা। একাধিক শিক্ষক নেতারা পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, মহাসমাবেশ থেকে ‘প্রধান শিক্ষকদের পরের ধাপে বেতন নির্ধারণের’ দাবি মেনে নেয়ার জন্য আলটিমেটাম দেয়া হবে। এতেও সরকার সম্মত না হলে লাগাতার ক্লাস বর্জন এবং সর্বশেষে আসন্ন সমাপনী পরীক্ষা বর্জনের মতো ঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।

 

শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইসলাম তোতা গতকাল বিকেলে বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনবৈষম্যের অবসানে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। তিনি আশ্বাস দিলেই কেবল শিক্ষকরা ঘরে ফিরে যাবেন। শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নীতিনির্ধারণী কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সরকার বলেন, কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

 

শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, সরকার বা মন্ত্রণালয় আসন্ন সমাপনীর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এটাই প্রত্যাশা শিক্ষকদের। অন্যথায় শিক্ষকরা মহাসমাবেশ সফল করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

আরও সংবাদ