জায়গা মিলেনি বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরের

জায়গা খুঁজতে খুঁজতে পার হয়ে গেছে এক দশক। এখনো বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে। স্থান নির্ধারণসহ সমীক্ষার কাজ করতে ইতোমধ্যে ১১৫ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প ঝুলে আছে স্থানীয় আপত্তির কারণে। এর পেছনে রাজনীতিও আছে। প্রথমে বাধার মুখে আড়িয়ল বিল থেকে সরে যায় সরকার। এর পর আন্তর্জাতিক পরামর্শকের প্রতিবেদন অনুযায়ী মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের শিবচর এলাকা নির্ধারণ করা হয়। সেখানেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আপত্তির কারণে স্থান চূড়ান্ত করা যায়নি।

বলা হচ্ছে, আট হাজার পরিবারকে সরানো কঠিন কাজ। তাই সমীক্ষাপর্বের কাজ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে উপযুক্ত জায়গা নির্ধারণে আপাতত ব্যর্থ হওয়ায় শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোতেই গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমানবন্দরকে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজ চলছে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরের জন্য অপেক্ষাকৃত কম ঘনবসতিপূর্ণ এবং খাসজমির পরিমাণ বেশি এমন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। এ জন্য কাজ করছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তা ছাড়া হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণসহ অন্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর মানোন্নয়নে কাজ চলছে। ফলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সক্ষমতা বাড়বে।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বর্তমান বিমানবন্দরের ভবিষ্যতে সক্ষমতা হ্রাসের আশঙ্কা থেকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বলা হয়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক

বিমানবন্দর আপগ্রেডেশন হলেও বিদ্যমান চাহিদা পূরণ করতে পারবে বড়জোর ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। এমন বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগে গতি পায়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ক্রমবর্ধমান বিমানযাত্রী ও কার্গো পরিবহনের চাহিদার কারণে ১৪ হাজার ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ৩টি রানওয়েবিশিষ্ট বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা লাগতে পারে। পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে ড্রইং-ডিজাইন চূড়ান্ত হলে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারিত হবে। জায়গা নির্বাচন, মাস্টার প্ল্যানিং প্রণয়ন, ড্রয়িং-ডিজাইনসংশ্লিষ্ট কাজসহ প্রকল্পের অবশিষ্ট অংশ শেষ করতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৭ সালেই শেষ হয়ে গেছে। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণের সবচেয়ে বড় বাধা স্থানীয়দের আপত্তি। স্থানীয় জনসাধারণ, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে বিমানবন্দরের গুরুত্ব বোঝানো ছাড়াই মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। তখনই নির্মাণ প্রকল্পের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামে স্থানীয়রা। একপর্যায়ে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্যও নিহত হন। এমন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। অথচ আড়িয়ল বিলেই এখন বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য দাবি করছেন স্থানীয়রা। এমনকি বিমানবন্দর নির্মাণের দাবিতে স্থানীয়রা একটি কমিটিও গঠন করেছে। বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের জন্য সরকার একটি সেল গঠন করেছিল। এর প্রধান ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জয়নুল আবেদিন তালুকদার। ওই সেলের দায়িত্ব পালনকালেই আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দরের বিরোধিতা করে আন্দোলন হয়। বর্তমানে তিনি অবসরে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক যুগ্ম সচিব জয়নুল আবেদিন প্রতিবেদক কে বলেন, মানুষ তখন না বুঝেই বিরোধিতা করেছে। এখন ওই স্থানীয়রাই বিমানবন্দরের জন্য জায়গা দিতে মিছিল-সমাবেশ করছে। স্থানীয় প্রশাসন সে সময় জনগণকে সঠিকভাবে তুলে ধরলে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ এ বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি এতদিন ঝুলে থাকত না।
জানা গেছে, আড়িয়ল বিলের আগে এ বিমানবন্দর নির্মাণে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ময়মনসিংহের ত্রিশালে। সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় আড়িয়ল বিলে। এর পর জাপানের নিপ্পন কোয়েই নামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়, শরীয়তপুরের জাজিরা হয়ে মাদারীপুরের শিবচরে। সেখানে ঘনবসতি ও খাসজমি কম থাকায় বিমানবন্দরের জন্য নতুন জায়গা খোঁজার নির্দেশনা দেওয়া হয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে। তবে এর পেছনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আপত্তি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানকার অন্তত দুজন প্রতিনিধি সরকারের সংশ্লিষ্টদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকায় বিমানবন্দর করলে বিপুল পরিমাণ মানুষ (প্রায় ৮ হাজার পরিবার) উচ্ছেদ করতে হব

আরও সংবাদ