দমন-পীড়ন চালিয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবেন না: ডাকসু ভি

সরকারের উদ্দেশে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, ভিন্নমতের মানুষের ওপর ছাত্রলীগ-পুলিশলীগ দিয়ে দমন-পীড়ন চালিয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবেন না।

তিনি বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের যে ভিন্নমতের মানুষের ওপর দমন পীড়ন চলছে, সেখান থেকে এখন কেউ রক্ষা পাচ্ছে না। সাংবাদিক, ছাত্র, কবি,সাহিত্যিক, লেখক কেউই রক্ষা পাচ্ছে না।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ মিচিল পূর্ববর্তী এক প্রতিবাদ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

নোয়াখালী জেলা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মো. রাশেদ খাঁন, মোল্লা বিন ইয়ামিন, মো. আতাউল্লাহসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।

নুরুল হক নুর বলেন, একদিকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে অন্যদিকে সরকার নানা ধরনের আইন করে পুলিশের মাধ্যমে মানুষকে হয়রানি করছে।

তিনি বলেন, আজ আপনারা দেখছেন যে, সারা বাংলাদেশে যখন অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ সংগঠিত হয়, কোনো আন্দোলন হয় তখন সরকারের পুলিশ লীগ সেখানে হামলা চালায়। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগও সবসময় বর্বর হামলা চালায়।

ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি স্পষ্ট দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে সেখানের ছাত্র-শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। ভিসি অপসারণের সেই আন্দোলনে ছাত্রলীগ ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা চালিয়েছে। শিক্ষা উপমন্ত্রীও তাদের পক্ষেই একরকম সাফাই গেয়েছেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ থেকেও এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অথচ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বরং যারা আন্দোলন-সংগ্রাম করে সেই মানুষগুলোকেই নির্যাতন নিপীড়ন করা হচ্ছে।

ডাকসু ভিপি আরও বলেন, আমরা সরকারকে একটা কথাই বলতে চাই, আপনারা আজকে ক্ষমতায় থাকার জন্য পাগল হয়ে গেছেন। তাই দেশের মানুষের ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছেন। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভিন্নমতের মানুষের ওপরে প্রতিনিয়ত দমনপীড়ন চালাচ্ছেন এবং দেশকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। যারা আজ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, সরকারের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে তারা সবাই আজ নির্যাতনের শিকার, হামলার শিকার, মামলার শিকার। তাই আমরা বলতে চাই, এভাবে মানুষকে দমন করতে পারবেন না। মানুষ কিন্তু নিজ হাতে অস্ত্র তুলে নেবে। প্রয়োজনে আপনাদেরকে দেশ ছাড়া করবে।

ভিপি নুর বলেন, এদেশের মানুষ দেশকে রক্ষা করার জন্য, গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, সমাজের সেই মুক্তিযোদ্ধার সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে আবার নিজ হাতে অস্ত্র তুলে নেবে।

তিনি বলেন, আপনারা ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন নিজেদের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে। আজকে রাষ্ট্রের কোন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না। বিচার বিভাগ সরকারের নিয়ন্ত্রণে। আজকে আপনারা দেখেছেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রক্ত দিয়ে যারা এ দেশকে স্বাধীন করেছিল, দেশের মৃত্যুবরণের জন্য আকুতি দিয়েছিল। ভিন্নমতের রাজনীতির কারণে তাকে পাসপোর্ট দেয়া হয়নি। ছাত্র প্রতিনিধি হয়েও আমি পাসপোর্ট পাইনি। মানুষের মাঝে যে ক্ষোভ সে ক্ষোভ বারবার বুঝতে আপনারা ব্যর্থ হচ্ছেন। আপনারা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ প্রত্যেকটি আন্দোলনে দেখেছেন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। সে প্রতিবাদগুলো ওই ঘট্নাকেন্দ্রিক ছিলনা। আপনাদের যে ব্যর্থতা, যে দুঃশাসন, আপনাদের যে নির্যাতন নিপীড়ন, সে নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধেও চলছিল।

সুতরাং আজকে সময় থাকতে যদি আপনারা সংশোধন না হন তবে জনগণ কিন্তু আপনাদের বিতাড়ন করার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নামবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্রলীগের সংরক্ষণ পরিষদ নোয়াখালী জেলার আহ্বায়ককে পুলিশের ওসি ছাত্রলীগ দিয়ে মেরেছে। তারপর ওসি থানায় নিয়ে গিয়ে নিজে মেরেছে। আমি যখন ফোন দিয়েছিলাম তখন ওসি নবির হোসেন বলেছে পাবলিক মেরে দিয়েছে। দেখি কী করা যায়।

নোয়াখালীর ওই ওসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডাকসু ভিপি আরও বলেন, যখন বুয়েটের আবরার হত্যার প্রতিবাদ তারা করেছিল, তখন এই ব্যাক্কেল ওসি বলেছিল, ‘ঢাকার প্রতিবাদ নোয়াখালীতে কেন?’। নুসরাত হ্ত্যার প্রতিবাদ যখন তারা করেছিল, তখন সে একইভাবে বলেছিল নুসরাত হত্যার প্রতিবাদ নোয়াখালিতে কেন। এই হল পুলিশ লীগের আচরণ।

আরও সংবাদ