মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতিও রাজাকার

ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ও মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি। যার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন আজ সেই তিনিই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় হয়ে গেলেন রাজাকার! বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম মো. মজিবুল হক। যাকে এলাকার সবাই ‘নয়া ভাই’ নামে চিনে। তাকে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

পারিবারিক সূত্র ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন মো. মজিবুল হক নয়া ভাই। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকেছেন মজিবুল হক। মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠন থেকে শুরু করে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাথরঘাটা সংগঠনের সভাপতি ছিলেন নয়া ভাই। পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা ৪০ বছর সভাপতি ছিলেন তিনি, ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাথরঘাটার প্রত্যন্ত গ্রামে নয়া ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আশ্রয় নিয়েছেন মুক্তিকামী মানুষও। স্বাধীনতার স্বপক্ষের সংগঠক ও মুক্তিকামী মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী মজিবুল হক নয়া ভাইয়ের নাম সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় আসায় ক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যরাও।

এ বিষয়ে মজিবুল হকের স্ত্রী নুরহাজান বেগম (৮৭) বলেন, আমার স্বামী ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর মারা গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। সংগ্রাম পরিষদ পরিচালনা করেছেন। যুদ্ধের সময় আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী মানুষদের ভরণ-পোষণ দিয়েছেন। আজ সেই মানুষটা কি করে রাজাকার হয়?

বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবদুল মোতালেব মৃধা বলেন, মারা যাওয়ার এত বছর পর আবার ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন মজিবুল হক নয়া ভাই। তিনি কখনও রাজাকার ছিলেন না। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ও বন্ধু। ছিলেন স্বাধীনতার সংগঠক।তার নাম কি করে রাজাকারের তালিকায় এসেছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এই তালিকা কারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো আন্দোলনে নামবে মুক্তিযোদ্ধারা।

এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বরগুনা জেলা প্রশাসন বিষয়টি জেনেছে। রাজাকারের তালিকাটি কেবল প্রকাশিত হয়েছে। মজিবুল হক নয়া ভাই রাজাকার ছিলেন না। বিষয়টি তদন্ত করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরও সংবাদ