রোজার শারীরিক উপকারিতা


পবিত্র রমজান মাস। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই মাস। এই মাসে খাওয়া-দাওয়া, পানি পান করার সময় পুরোপুরিভাবে বদলে যাওয়ার জন্য শরীর অন্য পর্যায়ে চালিত হয়। এসব কারণে রোজার সময় শরীরে বিভিন্নরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন – গ্যাস্ট্রিক, পানিশূন্যতা, শারীরিক অস্বস্তি ইত্যাদি। কিন্তু রোজার রাখলে শরীরে অনেক উপকারিতাও মেলে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: বাড়তি ওজন যাদের, তারা এইসময়ে বিশেষভাবে উপকৃত হয়। যেহেতু এইসময় মানুষ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে, সকাল এবং সন্ধ্যেয় স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করে, যেমন- স্যুপ, রুটি, খেজুর এবং অন্যান্য ফল, যা দ্রুত ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার এড়ানো হয় বদলে তাজা ফল, তাজা শাকসবজি এবং পানি গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ওজন হ্রাস হয়।

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে: রমজানে রোজা রাখার অন্যতম সুবিধা হলো এটি আপনার রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। রোজা আপনার গ্লুকোজকে ভেঙে দেয় যাতে শরীর শক্তি পেতে পারে যা ইনসুলিনের উৎপাদন হ্রাস করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: রোজা এথেরোস্ক্লেরোসিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে। দেহ খাদ্য এবং পানি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পরেও শরীরে সঞ্চিত ফ্যাট শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রোজার সময় বিপাকের হারও হ্রাস পায়। অ্যাড্রিনালিন এবং ননঅ্যাড্রিনালিন হরমোনগুলির ক্ষরণও হ্রাস পায়; এটি বিপাকের হারকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

পেশীশক্তি সংরক্ষণ করে: আপনার পেশীগুলিতে সঞ্চিত ফ্যাট ব্যবহৃত হবে। আপনি যখনই কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করেন, তখন গ্লাইকোজেন (ফ্যাট সেল) যুক্ত হয়, যা ওজন বাড়িয়ে তোলে। তবে রমজানের রোজার সময় ফ্যাট কোষগুলি শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে: রোজার সময় মানুষ সাধারণত সেহরি ও ইফতারে মাঝে স্বাস্থ্যকর খাবার খায়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, টক্সিন নির্মূল করতে এবং চর্বি হ্রাস করতে সহায়তা করে। রোজা ভাঙার জন্য যখন খেজুর এবং ফল খাওয়া হয় তখন এগুলি শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজগুলির সঞ্চয় বাড়ায়। ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই সমস্ত ফলের মধ্যে উপস্থিত, যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

প্রদাহ দূর করে: রমজানে রোজা রাখার আরেকটি শারীরিক সুবিধা হলো এটি প্রদাহজনিত রোগ এবং অ্যালার্জির সারাতে সহায়তা করে। প্রদাহজনিত রোগের কয়েকটি উদাহরণ হলো- আর্থারাইটিস এবং ত্বকের রোগ যেমন সোরিয়াসিস। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, রোজার ফলে আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো প্রদাহজনক পেটের রোগ নিরাময়ের উন্নতি হতে পারে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে: অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, রোজা কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিনের উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের জন্য উপকারি। এই প্রোটিনগুলো মস্তিষ্কের স্টেম সেলগুলো সক্রিয় করতে সহায়তা করবে যাতে তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারে। এই কারণেই আপনি যখন রোজা রাখেন তখন আপনার মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে যায়।

মানসিক স্বচ্ছতা দেয়: রমজানের সময় রোজার আরেকটি মানসিক সুবিধা হলো এটি আপনার শরীরকে খাদ্য এবং পানীয়ের প্রতি কীভাবে আপনার আকাঙ্ক্ষাগুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন তা শেখার জন্য প্রস্তুত করে। এই প্রক্রিয়াতে, মস্তিষ্ক সেই অবস্থার সাথে মানিয়ে নেয় এবং কীভাবে আরও ধৈর্যশীল হতে হয় তা শেখায়।

লেখক: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কলামিস্ট।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ