ভালোবাসার ধর্ম
ভালোবাসার কোনো ধর্ম হয় না। ভালোবাসার ধর্ম সে নিজেই। এক ঝলক আলো কে যেমন খাঁচায় বন্দী করে রাখা যায় না! ঠিক তেমনি ভালোবাসা কে ধর্মের শিকলে আবদ্ধ করা যায় না।
আসলে ভালোবাসায় ধর্ম আসে অজুহাত স্বরূপ। অজুহাতের গ্যাড়াকলে ধর্মের ফোঁকর দিয়ে মানুষগুলো পালাতে চায় সুমিষ্ট বচনে।
আমি যখন রংপুরে ছিলাম, সেখানকার সেনানিবাস সংলগ্ন একটি পার্কে রোজ হাঁটতে যেতাম। ঘাঘট নদীর পাড় ঘেঁষে পার্কটি হয়েছে বলেই হয়তো এত সুন্দর! নদী আমার বরাবরই প্রিয় আবার তার সাথে যদি একটু কারুকার্য যোগ হয়ে শহুরে কোলাহল বিয়োগ হয়; তবে মন্দ কিসে!
পার্কে আমি রোজ একটি স্বাধীন সম্পর্ক দেখতে পেতাম। যেখানে নিশ্চিন্তে একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার কোলে মাথা রেখে ঘণ্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতো। আমি তাদের চোখে মুখে আনন্দের রশ্মি দেখতে পেতাম। যদিও তাদের সম্পর্ক টা ছিলো পরিপক্ক সম্পর্ক। আমরা শহুরে ভাষায় এটাকে বলি ম্যাচুরড রিলেশনশিপ।
একদিন লোকটাকে একা বসে থাকতে দেখে আমার কিছুটা অবাক লাগলো বলেই আমি তাকে মেয়েটির কথা জিজ্ঞেস করলাম।
– আপনার সাথে উনি কই?
– কে?
– ঐযে আপনার সাথে প্রতিদিন যিনি থাকেন!
তার চোখে অশ্রুর ঝলক আবিষ্কার করতে আমার খুব একটা সময় লাগেনি। সে চোখ লুকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো..
– সে নাই।
– নাই মানে? মরে গেছে?
লোকটি আমার উপর খুব বাজে ভাবে চটে গেলেন। মনে হচ্ছিল আমাকে ধরে ইচ্ছেমত থাপ্রাইতে ইচ্ছে হচ্ছিলো তার। তার উপরে আমি আবার ছোট খাটো মানুষ! একটু কাপা গলায় বললাম:
আরে ভাই মজা করছি। কি হয়েছে ওনার, আসেননি কেন?
তার কথায় বুঝলাম তার প্রেমিকা ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীর এবং তিনি মুসলিম; আর এটিই তার সম্পর্ক ভাঙার গুরুতর কারণ।
আসলেই এটি গুরুতর কারণ। যেখানে মুসলিমে মুসলিমে সম্পর্ক ভেঙে যায় ধর্মের অজুহাতে সেখানে হিন্দু-মুসলিমে সম্পর্ক মেনে নেওয়া পুরোপুরি অস্বাভাবিক।
তবে এসব দেখে আমি আহত হই। যেখানে মানুষের চেয়ে বৈষম্য বড় সেই সমাজ আমাকে আহত করে। তবে কবি হেলাল হাফিজের মত এবার থেকে আমি আর আহত হবো না –
“মানুষ না বোঝে যদি আরেক মানুষ,
আমি আহত হবো না, আহত হবো না
কবিতার কসম খেলাম আমি শোধ নেবো সুদে ও আসলে, এবার নিহত হবো
ওসবের কোনো কিছুতেই তবু আর আহত হবো না।”
লেখক: নাঈমুল হাসান শাওন
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান