আরব বিশ্বে এই প্রথম অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বকাপ!

সূরা আর-রহমান থেকে তেলাওয়াত, ইসলামি ঐতিহ্য আর শান্তির বার্তা ছড়িয়ে পর্দা উঠল ২০২২ ফিফা কাতার বিশ্বকাপের। আবারো বিশ্ব মেতে উঠল ফুটবল রোমাঞ্চে। গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় আরব দেশটির ৬০ হাজার আসনবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন আল বাইত স্টেডিয়ামে ছড়ানো হয়েছে আলোর রোশনাই। বিশ্বকাপের ইতিহাসে শীতকালে এটাই প্রথম আসর। আরব বিশ্বেও এই প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপ। এশিয়ায় এটি দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপে সিউলের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান ছিল চোখ ধাঁধানো। কাতার যেন ছাপিয়ে গেল সেটিকেও।

চোখ ধাঁধানো আতশবাজির জন্য উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানটি হয় স্থানীয় সময় রাতে। অনুষ্ঠানের শুরুতে কাতারের সাবেক আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানিকে দেখানো হয় স্টেডিয়ামের বড় পর্দায়। এই সময় উল্লাসে ফেটে পড়েন দর্শকরা। ২০১০ সালে সুইজারল্যান্ডে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের বিড জেতার পর ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিলেন তিনি। এরপরই প্রথা মেনে ট্রফি নিয়ে মাঠে হাজির হন ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্সের সাবেক ডিফেন্ডার মার্সেল দেশাই। তার প্রস্থানের পরই শুরু মূল উদ্বোধনী আয়োজন। শুরুতেই থাকল নাচ, গান। চেষ্টা থাকল কাতারের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরার। এরপরই মঞ্চে আসেন প্রবীণ মার্কিন অভিনেতা মর্গ্যান ফ্রিম্যান। দরাজ কণ্ঠে ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ অভিনেতা শোনালেন বিশ্বকাপের পথ পরিক্রমা। তার সাথে কথোপকথনে ইসালামে এক সঙ্গে শান্তিতে বসবাসের শক্তির বার্তা শোনালেন কাতারি ইউটিউবার ঘানিম আল মুফতাহ । এরপর আবার শুরু হয় গান। এবার কাতারের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে আসেন একদল শিল্পী। সঙ্গী তখন ছিল ঢাকা-ঢোল। হাতে ছিল তলোয়ার। গানের সঙ্গে চলতে থাকে আকর্ষণীয় ডিসপ্লে।

স্মৃতিচারণের এই পর্যায়ে ঘুরে ফিরে এলো আগের কয়েকটি আসরের থিম সংয়ের অংশবিশেষ। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে পুয়ের্তোরিকান গায়ক রিকি মার্টিনের ‘আলে! আলে! আলে!’ গান মনে করিয়ে দিলেন কাতার বিশ্বকাপের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের পারফরমাররা। এরপরই ২০১০ বিশ্বকাপের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে শাকিরার ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গানটিও পারফর্ম করা হয়। এ ছাড়াও ২০১৪ বিশ্বকাপে পিটবুল, জেনিফার লোপেজের গাওয়া ‘ওলে ওলা’ গানও পারফর্ম করা হয়। এসময় ড্রামের আওয়াজ ও নৃত্যের ঝংকারে কেঁপে ওঠে আল বাইত স্টেডিয়াম। অংশগ্রহনকারী ৩২টি দেশের পতাকা ও জার্সি পরে নৃত্যরত পারফরমাররা মুগ্ধ করে রাখে দর্শকদের।

এর পরপরই মঞ্চে ওঠেন দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটিএসের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য জাংকুক। কাতার বিশ্বকাপের অফিশিয়াল গান ‘ড্রিমারস’ গেয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম কোরিয়ান হিসেবে পারফর্ম করলেন জাংকুক। পরে ড্রিমারস গানে তার সঙ্গে সুর মেলান কাতারের গায়ক ফাহাদ আল কুবাইশি। তাদের সুরের ঝড় তোলার সময় কাতার বিশ্বকাপের মাসকট লা’ইবও পারফর্ম করে মঞ্চে। ফিফার ভাষায় মাসকট-ভার্স নামের অন্য এক জগৎ থেকে এসেছে আমুদে স্বভাবের উড়ন্ত ‘লা’য়িব’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বজুড়ে ফুটবলপাগল সবার জন্য সমান সুযোগের বার্তা দিয়ে দিয়েছে আরবের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা এই মাসকট। এসময় আল বাইত স্টেডিয়ামে ফিরে এসেছিল আগের বিশ্বকাপগুলোর মাসকটও। এক মঞ্চে উপস্থিতি জানিয়ে গেছে জাভাবিকা, ফুলেকো, জাকুমিরা।

আয়োজনের সমাপ্তি টানেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। উদ্ধোধনী ভাষণে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষে মানুষে বিভেদ ভুলে এই ঐক্য দেখতে কী দারুণ লাগছে! বিশ্বকে দোহায় স্বাগতম!’ এরপর সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ৪৫ মিনিটের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন কাতারের এক কর্মকর্তা। পর্দা উঠল কাতার বিশ্বকাপের। এরপর পরই এই ভেন্যুতেই মাঠে গড়ায় ফুটবলও। প্রাণবন্ত এক লড়াইয়ে আয়োজক কাতারকে ২-০ গোলে হারায় লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর। এই লড়াই কাতারের আটটি শহরে চলতে থাকবে ২৯ দিন ব্যাপী। যেখানে আরো ৩০টি দল আটটি গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে একটি ট্রফির জন্য। বিশ্বকাপ বলে কথা! সূত্রঃ ইনকিলাব

আরও সংবাদ