মহাজগতের ৭ রহস্য : বিজ্ঞানীর কাছেও নেই ব্যাখ্যা

নিউজ ডেস্ক:
গত কয়েক বছরে মহাকাশে দারুণ কিছু আবিষ্কার হয়েছে। মঙ্গল গ্রহে তরল পানির সন্ধান বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এদের মধ্যে অন্যতম। তবে বলাই যায়, চির রহস্যের মহাকাশের নগন্য অংশ আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে তুলে ধরা হয়েছে ৭টি মহা রহস্যের কথা। যার এখনো কোনো কূল-কিনারা করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

১. মহাজগতের যতটুকু দেখতে পাই আমরা : আমরা যতটুকু দেখতে পেরেছি তা মহাজগতের মাত্র ৫ শতাংশ। অন্য ৯৫ শতাংশে রয়েছে ‘ডার্ক এনার্জি’ আর ‘ডার্ক ম্যাটার’। আমরা যদি এসব দেখতে না পারি, তবে সত্যটা কবে উন্মোচিত হবে? বিজ্ঞানীদের ধারণা, ডার্ক এনার্জি এক রহস্যময় শক্তি যা মহাজগতের আকার বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে চলেছে। আবার একে আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটির এক বড় ভুল বলেও ব্যাখ্যা করা যাবে। ডার্ক ম্যাটার অদৃশ্য বস্তু যা গ্যালাক্সির উপাদানের সমষ্টি। আমরা যতটুকু দেখতে পাই তা অতি সামান্য। আর বাকিটুকু ডার্ক ম্যাটার।

২. মঙ্গলে আসলে কি আছে? : মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ বিজ্ঞানীদের। সেখানে হয়তো প্রাণ ছিল অথবা এখনো আছে। এ গ্রহে বিশাল সাগর ছিল। এখনো সেখানে তরল পানির প্রমাণ মিলেছে। এ গ্রহে কি একসময় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল? মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

৩. উচ্চশক্তির কসমিক রশ্মি কোথা থেকে আসে? : মহাজগতের বিভিন্ন স্থান থেকে কসমিস রশ্মি প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে আঘাত করে চলেছে। এতে রয়েছে উচ্চগতির উপাদান যা মহাকাশ থেকে উড়ে আসে এবং অনেক সময় পৃথিবীতে এসে পড়ে। কম শক্তির কসমিক রশ্মি সূর্য থেকে আসে। সোলার উইন্ডের মাধ্যমে চার্জড উপাদান উড়ে আসে পৃথিবীতে। কিন্তু উচ্চশক্তির কসমিক রশ্মি চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি করে।

৪. ‘ফার্স্ট রেডিও বার্স্টস’ আসলে কি? : কোনো মহাকাশচারী যদি ভাগ্যবান হয়ে থাকেন, তবে তিনি মিলিসেকেন্ডের রেডিও তরঙ্গের এক ঝলক শনাক্ত করতে পারেন। একে বলা হয় ‘ফার্স্ট রেডিও বার্স্টস’। উচ্চশক্তির কসমিক রশ্মির মতোই এই ফার্স্ট রেডিও বার্স্টস কোথা থেকে আসে তা এখনো জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। অনেকের মতে, কসমিক রশ্মি যেখান থেকে আসে সেখান থেকেই ফার্স্ট রেডিও বার্স্টস আসে।

৫. অ্যান্টিম্যাটারের চেয়ে ম্যাটারের সংখ্যা বেশি কেন? : বস্তুর অংশ এবং প্রতিবস্তুর অংশ যদি পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষ করে, তবে একে অপরকে বিনাশের চেষ্টা করে। যদি ম্যাটার এবং অ্যান্টিম্যাটারে পরিমাণ সমান হতো, তবে বিশ্বজগতে কিছুই থাকতো না। কসমোলজি বলছে, বিগ ব্যাংয়ের সমান সংখ্যাক বস্তু এবং প্রতিবস্তু তৈরি করা উচিত ছিল। এর অর্থ হলো, তখন আমরা বস্তুকণাশূন্য পৃথিবীতে বাস করতাম। তবে কিছু কারণে বিগ ব্যাং প্রতিবস্তুর চেয়ে অনেক বেশি বস্তু সৃষ্টি করেছে। তত্ত্ব যতই থাক না কেন, পদার্থবিদ্যার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো, অ্যান্টিম্যাটারের কি ঘটে তা খুঁজে বের করা। অথবা কেন আমরা কেবল বস্তু দেখি? প্রতিবস্তু কেই বা অপ্রতিসম?

৬. পৃথিবীতে প্রাণের শুরু কিভাবে? : যে পৃথিবীতে আমরা থাকি, সেখানে প্রাণের শুরু কিভাবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। এটা সর্বকালের এক অজানা প্রশ্ন হিসাবেই রয়ে গেছে। এর কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক জবাব আমরা এখনো পাইনি। অনেক বিজ্ঞানীর মতে, গ্রহাণু বা ধূমকেতুর মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রাণ পৌঁছেছে। এটা একটা ভালো তত্ত্ব। কারণ মহাজাগতির বস্তুতে অর্গানিক উপাদান পাওয়া যায়। আবার অনেকে বলেন, মঙ্গলে একটি অংশ কোনো এক সময় পৃথিবীতে অবতরণ করে প্রাণের শুরু ঘটায়। আবার অনেকে তত্ত্ব দেন, সাধারণ মলিকিউল রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আরো জটিল মলিকিউল সৃষ্টি করেছে। এসব মলিকিউল আরএনএ-এর মতো যৌগ গঠন করেছে। এটা প্রাণ সৃষ্টি অন্যতম উপাদান।

৭. মহাজগতের ইতি ঘটবে কিভাবে? : জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, ৬ বিলিয়ন বছরের মধ্যে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া সূর্যের কারণে পৃথিবী বাষ্পীভূত হয়ে যাবে। তাহলে মহাজগতের বাকি অংশের কি ঘটবে? এ বিষয়ে কিছু তত্ত্ব রয়েছে। থার্মোডায়নামিকস তত্ত্ব বলছে, তাপমাত্রজনিত কারণে সবকিছু ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। মহাজগত যখন একই তাপমাত্রায় আসবে, তখন সকল গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি ক্ষয়ে যেতে থাকবে। আবার অনেকের মতে, বিগ ব্যাং থিওরির বিপরীতটা ঘটে যাবে। যদি ব্রহ্মাণ্ড ক্রমশ বাড়তে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিমাত্রায় চলে যাবে। এই শক্তির কারণেই সবকিছুর মধ্যে সংঘর্ষ লাগবে। এতে সবকিছুই এক সময় স্রেফ হারিয়ে যাবে।

আরও সংবাদ