উইঘুর মুসলিমদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নিচ্ছে চীন
চীনা কর্তৃপক্ষ মুসলিম সম্প্রদায় উইঘুর ও ফালুন গং আন্দোলনকারীদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নিচ্ছে। অর্থনীতি বিষয়ক মার্কিন গণমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের খবরে এমন তথ্য উঠে এসেছে। পরে এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পণ্য হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয় বলে খবরে বলা হয়েছে।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নেয়ার বিষয়ে দ্য চায়না ট্রাইব্যুনাল নামে একটি গোষ্ঠী গবেষণা করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সঙ্গে জেনেভায় মঙ্গলবার এক দীর্ঘ বৈঠকে তারা গবেষণার তথ্য দিয়ে এই অভিযোগ উত্থাপন করেছে।
গবেষকদের দাবি, উইঘুর মুসলমান, তিব্বতি, কিছু খ্রিস্টান সম্প্রদায় ও ফালুন গং ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছ থেকে হৃৎপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস ও ত্বক নিয়ে নিচ্ছে চীন সরকার। গত ২০ বছর ধরে এভাবেই তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এখনও এই নৃশংসতার চর্চা অব্যাহত রয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ১০ লাখ উইঘুর মুসলমানকে বন্দি করে রেখেছে চীন সরকার। তাদেরই অঙ্গপ্রতঙ্গ সংগ্রহের ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে দ্য চায়না ট্রাইব্যুনাল। আধ্যাত্মিক গোষ্ঠী ফালুন গং নিষিদ্ধ হওয়ার পরে তাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক রাখা হয়েছে।
নিজেদের একটি স্বাধীন, আন্তর্জাতিক গণট্রাইব্যুনাল হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে দ্য চায়না ট্রাইব্যুনাল। চীনে অঙ্গপ্রতিস্থাপন বন্ধে আন্তর্জাতিক জোট ও অস্ট্রেলিয়ায় আইনজীবী এবং চিকিৎসকদের নিয়ে গড়া একটি মানবাধিকারবিষয়ক দাতব্য সংস্থা তাদের সহায়তা দিয়েছে।
যেকোনো পরিস্থিতিতেই হোক না কেন, মানুষের অঙ্গ শরীর থেকে নিয়ে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীন। লন্ডনভিত্তিক দ্য ট্রাইব্যুনালের অভিযোগ গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছে বেইজিং। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় চায়না ট্রাইব্যুনালের হামিদ সাবি নামের এক আইনজীবী বলেছেন, অঙ্গ কেটে নেয়ার ঘটনায় তাদের হাতে প্রমাণ রয়েছে।
তিনি জানান, তারা দেখেছেন- উইঘুর ও ফালুন গং সদস্যদের মতো সংখ্যালঘুদের শরীর থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করার মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে চীন। ফালুন গং আধ্যাত্মিক আন্দোলন চীনে নিষিদ্ধ ও বহুদিন ধরে তাদের সদস্যরা নিপীড়িত হয়ে আসছেন।
দ্য চায়না ট্রাইব্যুনাল ওয়েবসাইটে আপলোড করা এক ভিডিওবার্তায় হামিদ সাবি বলেন, ফালুন গং ও উইঘুরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও ভিন্নমতের বন্দিদের কাছ থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জোর করে কেটে নেয়ার ঘটনা চীনে বহুদিন থেকেই ঘটছে। এটি হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকভাবেই।
ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়েছেন সাবি। যদিও সেটা সংখ্যায় কম। গত জুনে সেটি প্রকাশিত হয়েছিল। এতে বলা হয়, ব্যাপকসংখ্যক বন্দিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে চায়না সরকার। শরীরে প্রাণ থাকতেই কিডনি, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও কর্নিয়া ব্যবচ্ছেদ করা হয়। ত্বক ছড়িয়ে নেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তা পণ্য হিসেবে বিক্রি করা হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চীনা হাসপাতালগুলোতে খুবই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে অঙ্গপ্রতিস্থাপনের উদহারণ উল্লেখ করে দ্য চায়না ট্রাইব্যুনাল জানায়, শরীরের এসব অংশ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হয়। চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
যুগোস্লাভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসোভিসের বিচারের কৌঁসুলি ব্রিটিশ আইনজীবী জিওফ্রে নাইসের নেতৃত্বে এই প্রতিবেদন লেখা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে হামিদ সাবি দাবি করেন, হাজার হাজার লোক শতাব্দির অন্যতম এই নৃশংসতার শিকার হচ্ছেন।
তবে কতটাসংখ্যক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানুষের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়া হয়েছে বলে চায়না ট্রাইব্যুনাল মনে করে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি। এ ছাড়া উইঘুর কিংবা ফালুন গংয়ের কতজন সদস্য এই হিংস্রতার শিকার হয়েছেন, তাও উল্লেখ করতে পারেনি তারা।
আইনজীবী সাবি জানান, ভুক্তভোগীর জন্য ভুক্তভোগী, মৃত্যুর জন্য মৃত্যু। কিন্তু নিষ্পাপ, নিখুঁত, নির্দোষ, অক্ষত ও শান্তিপূর্ণ জীবিত লোকজনের হৃৎপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গ কেটে নেয়া হচ্ছে, যা চলতি শতকের সবচেয়ে বড় ও জঘন্য নৃশংসতা।
‘জীবন বাঁচাতে অঙ্গপ্রতিস্থাপন বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক বিজয়। কিন্তু অঙ্গদাতাকে হত্যা অপরাধ,’ বললেন এই মানবাধিকার কর্মী।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল নাগাদ তারা ফাঁসিতে দণ্ডিত বন্দিদের অঙ্গের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। তবে সাবির সাক্ষ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে চীন সরকারের তরফ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ তিনি বলেন, জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দায়িত্ব এই ট্রাব্যুনালের গবেষণা তথ্য নিয়ে তদন্ত করা। কেবল এটা গণহত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গেই না, মানবতাবিরোধী অপরাধও বিবেচনায় নিতে হবে।