পুনর্গঠন হচ্ছে সিলেট বিএনপির ১৬ ইউনিট
সিলেট জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক কমিটির মেয়াদও বেশিদিন উত্তীর্ণ হয়নি। কয়েক মাসের বেশি। এরপরও দলে ভেতরে গতি ফেরাতে ভেঙে ফেলা হয়েছে ওই কমিটি। কামরুল হুদা জায়গীরদারের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে আহবায়ক কমিটি। সিলেটে মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে নবাগত আহ্বায়ক কমিটি। আর আজ কমিটির নেতারা ইউনিটের নেতাদের নিয়ে প্রথম বৈঠকে বসছেন। বৈঠকটি পরিচিতিমূলক হলেও বেশ গুরুত্ব বহন করছে আজকের বৈঠক। এতে নজর থাকবে সিনিয়র নেতাদেরও।
আহবায়ক কমিটির নেতারা জানিয়েছেন- সিলেটে বিএনপির ১৭ ইউনিটের মধ্যে ১৬টি ইউনিট গতিশীল হয়ে কাজ করছে। আর জটিলতার কারণে গোলাপগঞ্জ পৌর ইউনিট বাতিল করা হয়েছে। এই ১৬ ইউনিট গঠনও খুব বেশি দিন হয়নি। বিগত কমিটির পূর্বে যে আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়েছিলো সেই কমিটি এই ইউনিটগুলো গঠন করেছিলো। এরপরও এই ইউনিটগুলো পুনর্গঠনে হাত দেয়া হবে। এজন্য তিন মাসের একটি টাইমফ্রেম রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ১৬ ইউনিটকে ঢেলে সাজানোর কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা। তারা বলেন- এই ইউনিটগুলো সক্রিয় রয়েছে। এরপরও দলের প্রয়োজনে আবারো তাতে ঘষামাঝা করা হবে। ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আহবায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ গতকাল বিকেলে জানিয়েছেন- যে ইউনিটগুলো রয়েছে সেগুলোও বেশি পুরনো নয়। এরপরও আহবায়ক কমিটি আবার নতুন করে চিন্তাভাবনা করবে। কারন- বিএনপির অভ্যন্তরে গতি ফিরিয়ে আনা। এজন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে জানান তিনি। জানান- ইউনিটগুলো শেষ করার পর জেলা বিএনপির সম্মেলন নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। তবে- সবকিছু হবেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে। বিএনপির এই প্রক্রিয়ার একমাত্র কারণ হলো, দলে গতি ফিরিয়ে আনা। এতে একটু বেশি সময় লাগলে সেটি কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এদিকে- সিলেট জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার জানিয়েছেন- নতুন আহ্বায়ক কমিটি কীভাবে কাজ করবে সেটি নির্ধারণ করা হবে বৈঠক করে। এর বাইরে সিনিয়রদের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। সিনিয়রদের মতামতের আলোকে আমরা রোডম্যাপ তৈরি করবো। আর এই ‘রোডম্যাপ’ অনুযায়ী কাজ করবো। এতে করে সিলেট জেলা বিএনপির আরো গতিশীল হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি। জানান- একক চিন্তাভাবনা নয়, দলের স্বার্থে সামগ্রিক চিন্তা মাথায় নিয়েই কাজ করতে হবে। আগামী দিনে স্বচ্ছ কমিটি উপহার দিতে যা করা প্রয়োজন সব করা হবে বলে জানান তিনি। ওদিকে- আহবায়ক কমিটি গঠনের পরপরই সিলেট জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন অন্তত ১০ জন নেতা। তারা এখন থেকেই মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ইউনিট কমিটি গঠন থেকে তারা কাজ শুরু করবেন। এর কারণ- গত বার সিলেট বিএনপির প্রথমবারের মতো ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলো। সম্মেলনের পর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করেছিলো সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। এ কারণে সিলেট বিএনপি কেন্দ্রীয় বিএনপির বাহবা কুড়ায়। সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটির নেতারা আস্থা অর্জন করে কেন্দ্রীয় নেতাদের। এর পাশাপাশি সিলেটে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও ছিলো ভালো। সিটি নির্বাচন নিয়ে মহানগর সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম প্রথম দিকে বাগড়া দিলেও পরবর্তীতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দেশান্তরী হয়েছেন। এক বছরের অধিক সময় থেকে তিনি বসবাস করছেন যুক্তরাজ্যে। ভারপ্রাপ্ত দিয়েই মহানগর কমিটির সাধারন সম্পাদক পদটি চলমান রয়েছে।
গত ২৪শে সেপ্টেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশেও সফলতা পেয়েছে। প্রশাসনের কাছ থেকে সমাবেশের কয়েক ঘণ্টা আগে অনুমতি পেয়েও সিলেটের সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটিয়েছে। এ সমাবেশের পর সিলেট বিএনপির ভেতরে নতুন করে আমেজ তৈরি হয়েছে। এবারের আহবায়ক কমিটি গঠন নিয়ে শুরুতে কিছুটা মন কষাকষি ছিলো সিনিয়র নেতাদের মধ্যে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটি কেটে যাচ্ছে। সিনিয়ররা ইতিমধ্যে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে জেলা বিএনপিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে- সিলেট জেলা বিএনপির আজকের প্রথম বৈঠকে গুরুত্ব দিচ্ছেন নেতারা। এ কারনে সব ইউনিটের দায়িত্বশীলদের ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সমস্যা চিহ্নিত করা হবে। এরপর নতুন করে পথ খোঁজা হবে। নতুন আহবায়ক জানান- ভেতরে ক্ষোভ রেখে চলা যায় না। সবার কথা ও মতামত শুনতে হবে। সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। এরপর সভার মতামতের আলোকে পথ চলতে হবে। এ কারণে এখন থেকে সব বৈঠকে মন-খুলে কথা বার্তা বলার সুযোগ করা হবে।
মানবজমিন