শ্রীমঙ্গল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ১৩ই অক্টোবর ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে লড়াই

 

আগামী ১৩ই অক্টোবর শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এ সম্মেলনকে ঘিরে সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীদের প্রাণচাঞ্চল্য অনেকটা বেড়েছে। শহর ও তৃণমূলের হাটবাজারে সম্মেলন উপলক্ষে আসা সম্ভাব্য অতিথিদের ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোস্টার সাঁটানো হচ্ছে। অতিথিদের সম্মানে বেশ কয়েকটি তোরণ ও গেট নির্মাণ হচ্ছে। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কদর বেড়ে গেছে। কে হবেন নতুন সভাপতি, সেক্রেটারি এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে নানা আলোচনা।

শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ইসমাইল মাহমুদ ফেসবুক লিখেন, ‘শ্রীমঙ্গল আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে এক নেতার অনুসারীরা প্রচার করছেন তিনি দুর্দিনের কাণ্ডারি। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী তথা নৌকা ডুবানোর মহান লক্ষ্য নিয়ে ওই নেতা ঘড়ি মার্কার সওয়ার হয়েছিলেন।

সেদিন কি দলের ‘সুদিন ছিল?’ বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি। উপজেলা যুবলীগের আরেক নেতা নুরুল আমিন লিখেন, ‘যারা নৌকাকে ডুবাতে চেয়েছিল ২০০১ সালে শ্রীমঙ্গলের সবাই জানে। ওদের লজ্জা থাকা উচিত। ভুনবীর ইউনিয়নের তৃণমূলের কর্মী বেলাল আহমেদ লিখেছেন, ‘শ্রীমঙ্গলের এবং কমলগঞ্জের জনগণ জানে কারা সেই দিন নৌকার বিরোধিতা করেছিল এবং দলের দুর্দিনে কাজ করেছেন। মুখে মুখে বললে হবে না জনগণ তার সাক্ষী। হাইব্রিডমুক্ত আওয়ামী লীগ হবে এবার।’

২০০৫ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি ইসমাইল হোসেনকে সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরপর সিনিয়র সভাপতি এমএ মনির সভাপতির দায়িত্ব পান। তিনিও মৃত্যুবরণ করার পর বর্তমানে সহসভাপতি মো. আছকির মিয়া সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

সাধারণ সম্পাদক রণধীর কুমার দেব উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হওয়াতে সে সময়ে দলীয় বিধিনিষেধের অজুহাতে পদত্যাগ করেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান। তার মৃত্যুজনিত কারণে দায়িত্ব পান যুগ্ম সম্পাদক এমএ মান্নান। সেই কমিটি গঠনের পর থেকে আর সম্মেলন না হওয়াতে গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে দলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এবার সভাপতি পদ প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আছকির মিয়া।

সভাপতি পদে আরেক প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মান্নান।
সভাপতি পদে আরেক প্রত্যাশী বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব। সভাপতি পদে অপর প্রত্যাশী বর্তমান শ্রীমঙ্গল পৌর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি অর্ধেন্দু কুমার দেব বেভুল। অপর সভাপতি পদ প্রত্যাশী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু শহীদ মো. আব্দুল্লাহ। সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সহিদ হোসেন ইকবাল। সাধারণ সম্পাদক পদে অপর প্রার্থী মো. ইউসুফ আলী। তিনি শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রহিমের অনুজ। সাধারণ সম্পাদক পদে অপর প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আকরাম খান। তিনি ’৯১ থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের নাম শোনা যাচ্ছে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি তফাজ্জুল হোসেন ফয়েজ, উপজেলা যুবলীগের বর্তমান সম্পাদক ছালিক আহমদ ও কালাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক শেখ মো. উপরু মিয়ার।

সম্মেলন নিয়ে পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ বলেন, ‘যাদের আওয়ামী লীগের সদস্য পদ আছে তাদের যে কেউ কাউন্সিলে প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু সৎ নিষ্ঠাবান এবং যারা দলের প্রতি আনুগত্য ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নৌকাকে ছেড়ে যায়নি এরাই আগামীতে সভাপতি সম্পাদক হবেন। এটাই তৃণমূল আওয়ামী লীগের চাওয়া।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী রোববার সকাল ১১টায় শ্রীমঙ্গল শহরের পুরানবাজারে আয়োজন করা হচ্ছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপিস্থত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। প্রধান বক্তা থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, উদ্বোধক মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বদর উদ্দিন কামরান, উপাধ্যক্ষ ড. মো. আবদুস শহীদ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমান, বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান। এতে সভাপতিত্ব করবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আছকির মিয়া ও সভা সঞ্চালনা করবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মান্নান।

সম্মেলন নিয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেক ইউনিয়ন থেকে ৩১ জন কাউন্সিলর। সে হিসেবে একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়ন মিলিয়ে ৩১০ জন কাউন্সিলর হবেন। তাছাড়া আরো যোগ হবে ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা কার্যকরী কমিটির সকল সদস্যবৃন্দ। তবে এ কমিটির ১০-১৫ জন সদস্য প্রবাসে চলে যাওয়া ও মৃত্যুজনিত কারণে ৪০-৪২ জনে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সম্মেলন দুইটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। একটি উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান, তাতে কাউন্সিলর ডেলিগেট সমর্থক সবাই উপস্থিত থাকবেন। সেখানে জাতীয় ও স্থানীয় জেলা উপজেলার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে বিকাল তিনটায় মূল অধিবেশন। সেখানে শুধু কাউন্সিলর আর উপজেলা, জেলা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ থাকবেন। সভাপতি ও সম্পাদক পদে কাউন্সিল অধিবেশনে যদি প্রথমে সমঝোতায় না পৌঁছা যায়, তাহলে চূড়ান্ত পর্যায়ে গোপন ভোট হতে পারে।

আরও সংবাদ