মুখোশধারী জননেতা

আলী মোহাম্মাদ ইউসুফ
“মুখোশধারী জননেতা” হাল আমলের রাজনীতি বিষয়ক একটি প্রবন্ধের শিরোনাম। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে এই প্রবন্ধের সূচনা। এটি লিখার উদ্দেশ্য হলো- এদেশীয় জাতীয় রাজনীতির অংশীদার এক জননেতার সাথে আমার একটি বেয়াদবিমূলক আচরণ-এর চুম্বক অংশ। শুধুমাত্র ঘটনাটি স্মরণ রাখার জন্য মূলত এটি লিখেছিলাম। এরপর লেখাটা একজন সাহিত্যিককে দেখালাম, তিনি এই লেখা দেখেই প্রশ্ন করলেন এই লেখাটা কি কোথাও ছাপাতে দিবো? বললাম আপাতত কোথাও ছাপাতে দিচ্ছি না। আর এমন লেখা ছাপা করে কোন সম্পাদক তার পত্রিকার মান প্রশ্নবিদ্ধ (?) করবেন বলে আমার মনে হয় না। তাই ফেইসবুকেই একটি পোস্ট দিয়ে দিবো, যেহেতু তিনি আমার বন্ধু তালিকায় আছেন, তাই তিনি দেখে ফেললেই আমার লেখা স্বার্থক!

 

এরপর উনি বললেন যে, এই লেখা দেখার পর তিনি তোমাকে প্রাণে মেরে ফেলতে চাইবে। কারণ সংক্ষিপ্তভাবে হলেও এখানে তার সমস্ত জীবনের কুকর্মগুলো ফুটে উঠেছে। কোথাও ছাপা হলে তো…! বললাম তিনি চাইলেই আমাকে এতো সহজে মেরে ফেলতে পারবে না আমার বিশ্বাস। পিছন থেকে যদি মেরে ফেলেন, তাহলে আমার কিচ্ছু বলার থাকবে না। আর সামন থেকে মারতে আসলে আমি অন্তত একজনকে নিয়ে মরবো! তিনি আবার বললেন যে- কোন মানুষের অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতনের কথা যদি তার কাছে সরাসরি বলো- এটা তার জন্য সহ্য করা খুবই কঠিন ব্যাপার। তাই সে যেকোনো মূল্যে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। তাছাড়া এই লেখা পড়ে পাঠক যদি তোমাকে বিশ্বাস করে, তবে তাদের প্রতি থুতু নিক্ষেপ করবে। আর তার প্রতি যে কিছু মানুষের অন্ধবিশ্বাস ছিলো, এটিও হারিয়ে যাবে কালের অতল গহ্বরে। কিছু পাঠক সামনাসামনি তোমাকে ধন্যবাদ দিবে, তোমার সাহসিকতার প্রশংসা করবে। আড়ালে তাদের কাছে গিয়ে বলবে কোথাকার এক অপদার্থ আপনার সমস্ত জীবনের অর্জনের উপর আঘাত করে ফেলেছে, তাকে এখই উচিৎ শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। না হয় পরবর্তীতে অন্যকিছু হয়ে যেতে পারে! তখন তিনি তার অন্যায় বুঝবেন ঠিকই। কিন্তু স্বীকার করবেন না। আর তোমার প্রতি তার প্রতিহিংসা বাড়বে আরো দ্বিগুণ। বললাম যে, প্রতিহিংসা বাড়লে বাড়ুক, তাতে কোন সমস্যা নেই। অন্তত একটি সুন্নতী মুখোশ তো জনসাধারণের কাছে উন্মোচিত হবে, সেটাই বা কম কিসে? সবমিলিয়ে পরবর্তীতে এই শিরোনাম যে একদিন “পাণ্ডুলিপি” হয়ে যাবে, তা ছিলো আমার কাছে কল্পনাতীত! এরপর প্রাসঙ্গিক আরো কিছু বিষয়াদি ঢুকে পড়লো লেখার ভিতর। লেখা হতে থাকলো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। মধ্যপথে আরেকবার লেখাটি ঐ সাহিত্যিককে পড়ালাম। তিনি কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে বললেন লেখাটি আপাতত নিজের কাছে রেখে দাও। আগামী বইমেলায় দেখা যাক কিছু করা যায় কি না? অতঃপর প্রুফ দেখার জন্য লেখাটি ছাপা করলাম। পৃষ্ঠা হিসাবে হয়ে গেলো ৭২ পৃষ্ঠা!

 

প্রবন্ধটি যখন বই হওয়ার স্বপ্ন দেখছে- তখন ভাবলাম যে, বইটি উৎসর্গ করে দেই মুখোশধারী ঐ জননেতাকে। একব্যক্তি বললেন এটি একটি ফাজলামি হয়ে যাবে। তাই এটাকে উৎসর্গ করা হবে “বাংলাদেশের সকল নোংরা রাজনীতিবিদদেরকে”। বইটি আপাতত বাজারে না আসলেও পাণ্ডুলিপি হাতে এসে গেছে। হয়তো আগামীদিন কিছু একটা হয়ে যেতে পারে, তবে অপেক্ষা করতে হবে।

লেখক : কলামিষ্ট

আরও সংবাদ