ভগ্নিপতির সঙ্গে বিয়ে ঠেকাতে ইউএনও কার্যালয়ে স্কুলছাত্রী
বগুড়ার শেরপুরে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখের হস্তক্ষেপ চাইলেন স্কুলছাত্রী রত্না খাতুন।
শহরের টাউন কলোনি এজে উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির (মানবিক বিভাগ) ওই ছাত্রী ও একই স্কুলের সহপাঠী বৃষ্টি খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার দুপুরের দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যায়।
সেখানে গিয়ে দুলাভাই জিল্লুর রহমানের সঙ্গে তার বাল্যবিয়ে ভাঙতে আবেদন করেন।
একইভাবে শেরপুর থানায় গিয়েও ওসির কাছে গিয়ে মা ও নিকট আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তাকে বাল্যবিয়ে দেয়ার আয়োজন চলছে বলে অভিযোগ করেন।
এ সময় স্কুলছাত্রী রত্না খাতুন সাংবাদিকদের জানায়, উপজেলার কুসুন্বি ইউনিয়নের দুবলাগাড়ী বণিকপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। কিছুদিন আগে বাবা হলুদ শেখ অকালে মারা যান। এরপর মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালান।
দুই বোনের মধ্যে সে ছোট। বড় বোন সীমা খাতুনের বিয়ে হয় গাইবান্ধা জেলা সদরের দুবাই প্রবাসী জিল্লুর রহমানের সঙ্গে। বিয়ের পর তাদের সংসারে এক ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বড় বোন সীমা খাতুন (৩০) তাদের বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
ওই স্কুলছাত্রী জানায়, দুলাভাই জিল্লুর রহমান বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। কিন্তু বোনের ছেলেকে দেখাশোনা ও সংসার ধরে রাখার জন্য দুলাভাইয়ের সঙ্গে তাকে বাল্যবিয়ে দেয়ার আয়োজন চলছে। সম্ভবত দুই-একদিনের মধ্যেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিয়ে হবে।
সে বলে, আমি এই বাল্যবিয়েতে রাজি নই। আমি লেখাপড়া করে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে চাই। নিজে স্বাবলম্বী হয়ে বিয়ে করব। তাই দুলাভাইয়ের সঙ্গে আমার বাল্যবিয়ে ঠেকাতে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
রত্নার সহপাঠী বৃষ্টি খাতুন জানায়, যে কোনোভাবে এই বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। তাই প্রশাসনের কাছে এসেছি। এ ছাড়া আমাদের এলাকায় কোনো বাল্যবিয়ে হতে দিব না। এ জন্য আমরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই।
এ ঘটনা সম্পর্কে বক্তব্য জানতে রত্না খাতুনের মায়ের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে তার মামাতো ভাই মঞ্জুরুল হক জানান, বড় বোনের ছেলেকে দেখা-শুনা ও সংসার ধরে রাখার জন্য ভগ্নিপতির সঙ্গে ছোটবোন রত্না খাতুনকে বিয়ে দেয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু রত্না এতে রাজি নয়। এ ছাড়া তার বয়সও অনেক কম। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিয়ে না দিতে নিষেধ করেছে। তাই তার বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে আমরা সরে এসেছি। ফলে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বুলবুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানার পর ওই স্কুলছাত্রীর বাসায় পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পাশাপাশি তাকে বাল্যবিয়ে না দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, মৌখিকভাবে ঘটনাটি জানতে পেরে ওই ছাত্রীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকেও বিয়ে বন্ধে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, মৌখিকভাবে ঘটনাটি জানতে পেরে ওই ছাত্রীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকেও বিয়ে বন্ধে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পরে পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা গিয়ে বাল্যবিয়ে না দিতে স্কুলছাত্রী রত্নার পরিবারের সদস্যদের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নিয়েছেন বলে জানান এই নির্বাহী কর্মকর্তা।