৫ প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ হচ্ছে না

নির্ধারিত ব্যয় ও সময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না ৫ মেগা প্রকল্প। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে প্রায় ৪২ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। এরপরও বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে। ফলে এসবের সুফল ভোগের বিষয় আটকে যাচ্ছে দীর্ঘসূত্রতায়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রজেক্ট, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু-গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ। ৫ প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৫৮ হাজার ৬৬৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। নানা কারণে ব্যয় বেড়ে ১ লাখ ৮২৪ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- নকশায় ক্রটি, সম্ভাব্যতা যাচাই দুর্বলতা, অর্থায়ন জটিলতা, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন ব্যয় বৃদ্ধি। সমস্যাগুলোর কারণেই বাস্তবায়নের সময়ও বাড়ানো হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালকরা বলছেন, বাস্তবায়ন দেরি হলে ব্যয় তো কিছুটা বাড়বেই। এসব ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। এদিকে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বলছে, ৭০ শতাংশ প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। অনেক সময় বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়লেও নির্দিষ্ট সময়ে, প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন জরুরি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এটা জনগণের টাকার অপচয়। যথাসময়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে অনেক কম খরচ হতো। যারা সম্ভাব্যতা যাচাই করেন তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণের বিষয়ে দক্ষ হন না। সঠিকভাবে ব্যয়ও নির্ধারণ করতে পারেন না। এছাড়া নানা কারসাজিও থাকে। ফলে কস্ট বেড়ে যায়। প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং মনিটরিংসহ সব জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে। এ কারণে প্রকল্পের সুফল জনগণ দেরিতে পায়।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, ব্যয় বৃদ্ধির কারণগুলো খতিয়ে না দেখলে বলা মুশকিল। তবে ভূমি অধিগ্রহণের নতুন নীতিমালা হওয়ার আগেই যদি কোনো প্রকল্প অনুমোদন হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। কিন্তু শুধু গাফিলতি, নকশায় ত্রুটি, বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা এমন কারণে ব্যয় বেড়ে গেলে তা অবশ্যই অপচয়। তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, সেহেতু এগুলো এগিয়ে নিতে ঠিকাদারদের দিকে নজর রাখতে হবে। কেননা তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন কাজ করছে কিনা তা দেখতে হবে। ঠিকাদারদের জবাবদিহিতি নিশ্চিত করা জরুরি।

সূত্র জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। সে সময় মূল অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়াসহ নানা জটিলতায় শুরুতেই হোঁচট খায় প্রকল্পটি। পরে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন পর্যায়ে নদীর তলদেশে মাটির স্তরের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে দ্বিতীয় সংশোধন করতে হয়।

এ পর্যায়ে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে মূল বরাদ্দের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে ১৮ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে মেয়াদ আরও বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ফের নতুন করে দেড় বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নতুন মেয়াদ ধরা হয়েছে। গত জুলাই মাস পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭২ শতাংশ। মূল সেতু নির্মাণ কাজ ৮২ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ব্যয় কেন বেড়েছে সে বিষয়ে সবাই জানেন। পুরনো চর্বি এটা, তাই এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।

সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (পিপিপি) প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। মূল অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। কিন্তু পুনর্বাসন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ১৬৫২ কোটি ২১ লাখ টাকা। ফলে মোট খরচ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া প্রথম সংশোধনীতে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। শুরু থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। জানতে চাইলে প্রকল্পের সাবেক পরিচালক (পিডি) কাজী মো. ফেরদৌস বলেন, বাস্তবায়ন দেরি হলে ব্যয় বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

আরও সংবাদ