রোহিঙ্গা ডাকাত দলের সন্ধানে হেলিকপ্টারে অভিযান
ড্রোনের পর এবার হেলিকপ্টার দিয়ে রোহিঙ্গা ডাকাত দলের খোঁজে কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড়ে অভিযান চালিয়েছেন র্যাব-১৫-এর সদস্যরা। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে না পারলেও কয়েকটি সন্দেহভাজন আস্তানা শনাক্ত করা হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত টানা সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী কয়েকটি দুর্গম পাহাড়ে এ অভিযান চালানো হয়েছে। এ তথ্যটি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১৫ কক্সবাজারের অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ।
গত ২৫ অক্টোবর প্রথমবারের মতো র্যাবের হেডকোয়ার্টার থেকে ড্রোন এনে টেকনাফে পাহাড়ে উড়িয়ে ডাকাতের আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছিল।
র্যাব সূত্র জানায়, হেলিকপ্টার অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন র্যাব-১৫ কক্সবাজারের অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ। এ সময় সঙ্গে ছিলেন উপ-অধিনায়ক মেজর রবিউল ইসলাম, সিপিএসসি কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান, সিপিসি-১ টেকনাফ কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট (বিএন) মির্জা শাহেদ মাহাতাব, সিপিএসসি স্কোয়াড কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকার ও সিপিসি-২ হোয়াইক্যং কোম্পানি কমান্ডার এএসপি শাহ আলম প্রমুখ। এ সময় স্থলপথেও র্যাবের অর্ধশতাধিক সদস্যের একটি দল অভিযানের সঙ্গে ছিল।
অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, হেলিকপ্টার থেকে রোহিঙ্গা শিবিরসংলগ্ন কয়েকটি পাহাড়ে আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে টেকনাফ উপজেলা পরিষদ এলাকায় পাহাড়ের ওপরে সন্দেহভাজন কয়েকটি ঘর দেখা গেছে। পাহাড়গুলো অনেক বড় হওয়ায় ড্রোন দিয়ে ডাকাত দলের সন্ধান পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই এবার নিজস্ব হেলিকপ্টারের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির-সংলগ্ন পাহাড়ে অভিযান চালানো হয়েছে। পাহাড়ের ভেতরে সন্ধান পাওয়া ডাকাত দলের আস্তানাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
আজিম আহমেদ বলেন, ‘পাহাড়ে রোহিঙ্গা শীর্ষ ডাকাত আবদুল হাকিমসহ কয়েকটি সন্ত্রাসী ডাকাত দলের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তারা হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। দ্রুত তারা আটক হবে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে ডাকাত সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তারা পাহাড়ে অবস্থান করে আসছে। তবে প্রায় সময় পাহাড় থেকে নেমে এসে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সোনা, টাকা ও খাদ্যসামগ্রী লুটপাট করে নিয়ে যায়। রাতে ডাকাত দলের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে রোহিঙ্গাদের বাসায় ঢুকে মালামাল লুট ও লোকজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ডাকাতি ছাড়াও তারা অপহরণ, ধর্ষণ, ছিনতাই, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের মূল হোতা আবদুল হাকিম ছাড়াও রয়েছে জকির, সেলিমসহ অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, এখানে বসবাসকারীরা রোহিঙ্গা নাগরিক হলেও কেউ নিরাপদ নয়। প্রায় সময় আবদুল হাকিমের লোকজন শিবিরে ঢুকে রোহিঙ্গাদের মারধর করার পাশাপাশি অনেককে অপহরণ করে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে আসছে। শিবিরসংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় আবদুল হাকিম বাহিনীর অবস্থানের খবর রয়েছে। আকাশপথ ও স্থলপথে র্যাবের অভিযান চালানো হলেও রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দারা সব সময় আতঙ্কে জীবন যাপন করে আসছে।