ইউরোপে কৃষকের টাকা মেরে খায় নেতারা

কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে থাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। কমন এগ্রিকালচারাল পলিসি বা ক্যাপের অধীনে প্রতি বছর প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ব্যয় করা হয়।

কিন্তু যাদের জন্য এ বিশাল অর্থ দেয়া হয় তাদের হাতে পড়ছে না। বেশিরভাগই মেরে খায় ইইউ দেশগুলোর নেতারা। এ অর্থেই ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন। নিজেদের ক্ষমতা আরও শক্ত ও পোক্ত করছে রাজনীতিকরা।

বাড়ছে অর্থের অবৈধ লেনদেন। শুধু নেতারাই নয়, এ অর্থ যাচ্ছে নেসলের মতো বড় বড় খাদ্য উৎপাদন কোম্পানিগুলোর পকেটেও।

১৯৬২ সালের কৃষিনীতি অনুযায়ী এ কৃষি ভর্তুকি বিলি করে থাকে ইইউ। প্রধানত ফসল বা ফল ফলানো, পশুপালন, কৃষিজাত পণ্য রফতানির মতো খাতে দেয়া হয় এ ভর্তুকি ।

আবার কম কীটনাশক ব্যবহার, আইলে গাছ না লাগানো, জমি ফেলে রাখা, পুকুর না বোজানো, গাছ বা ঝোপঝাড় বাঁচিয়ে রাখা ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্যও মেলে ভর্তুকি।

বিনিময়ে ইউরোপকে খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছে কৃষকরা। কৃষিজীবীদের আয়ের নিরাপত্তা না থাকলে ইউরোপবাসী এত কম দামে এ পরিমাণ খাবার-দাবার কিনতে পারতেন না। ৭৫০ ধরনের স্থানীয়, প্রথাগত খাদ্যদ্রব্য আর প্রায় ২ হাজার বিভিন্ন ধরনের সুরা ও মদকে এভাবে সুরক্ষিত করে রাখা যেত না।

মার্কিন ফুড ইন্ডাস্ট্রি ইউরোপের বাজার ভাসিয়ে দিত। ভর্তুকির টাকার বড় অংশটিই বৃহৎ ফার্মগুলোর পকেটে যায় বলে অভিযোগ করে আসছেন কৃষকরা।

চলতি সপ্তাহে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন জার্মানির কৃষকরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রতি বছর জার্মানির ৩ হাজার ৩শ’ বৃহৎ খামার ১১৪ কোটি ডলার ভর্তুকি নিচ্ছে। যেখানে পরিবারভিত্তিক ২ লাখ কৃষি খামার পাচ্ছে ৭৯ কোটি ডলার।

এ ভর্তুকির কারণে বড় কোম্পানিগুলো লাভবান হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপের ৯০ শতাংশই গ্রামাঞ্চল। সেখানে ৬০ শতাংশ অধিবাসীর বাস।

অথচ ইউরোপে কৃষিজীবীর সংখ্যা প্রতি বছর দুই শতাংশ কমে যাচ্ছে। চাষী ছাড়া গ্রাম বাঁচে না, গ্রামীণ সংস্কৃতি বাঁচে না। একথা ইউরোপেও সত্য। কিন্তু ক্যাপের ভর্তুকির ৮০ শতাংশ যায় বড় খামারগুলোর কাছে। এর মধ্যে যেমন ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ পড়েন। যিনি বছরে পাঁচ লাখ ইউরো কৃষি ভর্তুকি পান।

তেমনই ক্যাম্পিনা কিংবা নেসলের মতো বিশাল বিশাল খাদ্য কোম্পানিগুলোও পেয়ে থাকে। এভাবে গত বছরই ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার ট্যাঁকে গুজেছেন চেক রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ বাবিস।

হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের জাকভার শহর। কমিউনিস্ট শাসনামলে এখানকার কৃষকদের সব জমি কেড়ে নেয়া হয়েছিল। মাইলের পর মাইল এলাকাজুড়ে জোরপূর্বক শ্রম দিতের কৃষকরা। গম আর অন্য ফসল সরকারের গোলায় তুলে দিত।

প্রায় ৩ দশক পরে এসে বর্তমানে সেই সব কৃষকের ছেলেমেয়েরা নতুন এক শ্রেণির ‘জমিদার’র অধীনে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটেন। দেশটির ধনিক শ্রেণি, রাজনৈতিক নেতা ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরাই এ নতুন জমিদার। তৈরি করেছে আধুনিক ধাচের সামন্ত ব্যবস্থা।

আরও সংবাদ