টেকসই ডেনিম উৎপাদনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে
শুধু উৎপাদকদের নয়, টেকসই ডেনিম উৎপাদনে ক্রেতা ও ব্র্যান্ডদের এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে ডেনিমের ধারা পাল্টেছে। আন্তর্জাতিক ধারার সঙ্গে দেশি উৎপাদকদের খাপ খাওয়াতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।
ডেনিম প্যান্ট ওয়াশে পানির ব্যবহার হ্রাস করতে নিত্যনতুন যন্ত্রপাতি কিনতে হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সোলার কেনা হচ্ছে, যা ব্যয়বহুল। কিন্তু সে অনুযায়ী দর পাওয়া যাচ্ছে না। তাই টেকসই ডেনিমকে উৎসাহিত করতে ব্র্যান্ড ও ক্রেতার ভূমিকা রয়েছে।
বুধবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত ডেনিম এক্সপোর সমাপনী আলোচনায় দেশি উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেছেন।
‘আমরা সবাই দায়বদ্ধ- ডেনিম শিল্পের টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় সঞ্চালনা করেন কিংপিন্স শো’র প্রতিষ্ঠাতা এন্ড্রু ওলা। আলোচক হিসেবে অংশ নেন যমুনা গ্রুপের গ্রুপ ডিরেক্টর সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম, অনন্ত গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ জহির, নেদারল্যান্ডসের পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পলিসি অফিসার জোস্ট লিনা, গ্রুপ ক্যারিফোরের কান্ট্রি ম্যানেজার কেএম খলিলুর রহমান, এইচঅ্যান্ডএমের রিজিওনাল কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়া) জিয়াউর রহমান ও জাস্ট-স্টাইলের নিউজ এডিটর হান্নাহ আবদুল্লাহ।
যমুনা গ্রুপের গ্রুপ ডিরেক্টর সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম বলেন, আমরা মানসিকতায় পরিবর্তন এনেছি। ক্রেতাদের পরামর্শে বা চাহিদার জন্য নয়, যমুনা গ্রুপ দেশের জন্য, পৃথিবী সুরক্ষায় সর্বোপরি নিজেদের চাহিদার জন্য টেকসই ডেনিম উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছে। কীভাবে পানির ব্যবহার পরিমিত করা যায়, বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো যায়, সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইটিপির চালানো ব্যয় সাপেক্ষ হলেও যমুনায় ৮০ শতাংশ পানি পুনরায় ব্যবহার করা হয়। মেঝে ধোয়ামোছা ও প্যান্ট ওয়াশে সেই পানি ব্যবহার করা হয়। এরই মধ্যে বিদ্যুতের ব্যবহার হ্রাস করতে সোলার প্ল্যান্ট ও জুট বয়লার স্থাপনে বড় আকারের বিনিয়োগ করেছে। ভবিষ্যতে আরও বিনিয়োগ করবে। টেকসই পোশাক উৎপাদনে যমুনা গ্রুপ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা দেশের ডেনিম শিল্পের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন, ডেনিমকে টেকসই করতে ক্রেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। বাড়াতে হবে পোশাকের দাম। এছাড়া টেকসই ডেনিম সম্ভব নয়।
এইচঅ্যান্ডএমের রিজিওনাল কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, টেকসই ডেনিমকে দুই ভাগে ভাগ করেছে এইচঅ্যান্ডএম। প্রথমত, পরিবেশ সুরক্ষিত রাখা। এজন্য কেমিক্যাল ও পানির ব্যবহার হ্রাস করতে নিজস্ব উৎপাদকের ব্যাপারে বলা হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন। মেশিনের পেছনে যেসব শ্রমিক কাজ করে তাদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ, মজুরি বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক ইস্যুতে গুরুত্ব দিচ্ছে এইচঅ্যান্ডএম। সঞ্চালকের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। তাই টেকসই পোশাক উৎপাদনে সরকারকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে মিটার মনিটরিং করতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠানে ইটিপি থাকলেও সেগুলো ঠিকভাবে পরিচালন করা হচ্ছে না।
অনন্ত গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ জহির বলেন, টেকসই ডেনিম বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কাছে নতুন ইস্যু। পানির ব্যবহার ও জ্বালানির হ্রাস নিয়ে আগে কেউ চিন্তা করেনি। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে উদ্যোক্তারা এসব বিবেচনায় নিয়ে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছেন। তবে সে অনুযায়ী দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টিও ক্রেতাদের মাথায় রাখা দরকার। পাশাপাশি যারা মেশিন উৎপাদন করে, তাদেরও এ বিষয়ে সচেষ্ট হওয়া দরকার।
কিংপিন্স শো’র প্রতিষ্ঠাতা এন্ড্রু ওলা বলেন, ডেনিম ওয়াশে বাংলাদেশে প্রচুর পানি ব্যবহার হচ্ছে। এটিকে কমিয়ে আনতে সব পক্ষকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
পর্দা নামল ডেনিম এক্সপোর : দুই দিনব্যাপী ডেনিম এক্সপোর ১১তম আসর শেষ হয়েছে। এবারের আসরের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘রেসপনসিবিলিটি বা দায়িত্ব’। বিশ্বখ্যাত সুইডিশ পোশাক ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম এক্সপোর সহযোগী হিসেবে অংশগ্রহণ করেছে।
এবারের এক্সপোতে বিশ্বের ১১টি দেশের ডেনিম উৎপাদনকারী ৯৯টি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়ে তাদের উৎপাদিত ফেব্রিক্স, গার্মেন্ট, সুতা, পোশাক খাতের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, অ্যাকসেসরিজ প্রদর্শন করেছে। এতে বাংলাদেশের খ্যাতনামা সব প্রতিষ্ঠান মেলায় তাদের পণ্য প্রদর্শন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- যমুনা ডেনিম, হা-মীম ডেনিম, শাশা ডেনিম, স্কয়ার ডেনিম, ডেনিম এক্সপার্ট, ডেনিম সলিউশন ও প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল।