চাল আমদানি শুল্ক ফের বাড়ানোর সুপারিশ

আমন ১ কোটি ৪০ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন এবং আউশের উৎপাদন প্রায় ২৮ লাখ মেট্রিক টন

এবার পর্যাপ্ত চাল উৎপাদন হওয়ায় এবং কৃষকের প্রকৃত মূল্য নিশ্চিত করতে আমদানি শুল্ক আরেক দফা বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওই কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। সুপারিশের আগে বৈঠকে চালের ওপর শুল্ক বাড়ানোর পক্ষে একমত পোষণ করেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি আগামীতেও চালের উৎপাদন ও বাজারমূল্য সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

প্রসঙ্গত, গত ২২ মে চাল আমদানি পর্যায়ে শুল্ক বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। ওই দেশের অভ্যন্তরীণে ধানের উৎপাদনও ভালো ছিল। তখন কৃষকদের বড় ধরনের লোকসান ঠেকাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এসআরও জারি করে শুল্ক হার ২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়।

এর মধ্যে কাস্টমস্ ডিউটি ২৫ শতাংশ এবং রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ শতাংশ ও অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ করা হয়। এ উদ্যোগ নেয়ার পর কৃষক পর্যায়ে লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। বাজার পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়।

বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী এবং খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভাপতি সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সরকারি খাদ্যশস্যের মজুত স্তর সর্বদা সন্তোষজনক পর্যায়ে বজায় রাখতে হবে। আর চাল আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক কর হার বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়া হল।

খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির ওই বৈঠকে সর্বশেষ খাদ্য উৎপাদন মজুদ ও আমদানি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। মজুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি খাতে মোট খাদ্যশস্য মজুত আছে ১৬ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন।

এর মধ্যে ১২ লাখ ৮৩ হাজার টন চাল ও ৩ লাখ ৭০ হাজার টন গম রয়েছে। এই মজুত পরিস্থিতিকে সন্তোষজক ও খাদ্য নিরাপত্তা জোনে আছে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়। ওই সভায় আরও বলা হয় ২০১৯ সালের বোরো সংগ্রহ বেশ সংগ্রহ ভালো হয়েছে।

এর মধ্যে সংগ্রহ মৌসুমে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে ১০ লাখ ১০ হাজার টন চাল ও ৩ লাখ ৯৯ হাজার টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। এর বাইরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গম সংগ্রহ করা হয় ৪৪ হাজার ১৫৮ টন।

তবে আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের কারণে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি অনেক কমেছে। চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) অর্থবছরে গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের নিজস্ব অর্থে বিদেশ থেকে ২ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি।

আর বেসরকারিভাবে মাত্র ৪ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়। অথচ এর আগের অর্থবছরে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল। এদিকে চলতি অর্থবছরের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিদেশ থেকে গম আমদানি করা হয় প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক।

সূত্র জানায়, উল্লিখিত তথ্য বিশ্লেষণ করে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। বিশেষ করে খাদ্যশস্য মজুত স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকায় চাল আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ক হার আরও বাড়ানোর ব্যাপারে একমত পোষণ করা হয় ওই বৈঠকে। আর এটি কার্যকর করতে সুপারিশ করা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়কে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, দেশের ভেতর মজুতকৃত খাদ্যশস্য নিরাপত্তা ঝুঁকি রেখার ওপরে আছে। চাহিদার তুলনায় মজুত পরিস্থিতি ভালো হয়েছে। ফলে ঘাটতি না থাকায় এই মুহূর্তে চাল আমদানির প্রয়োজন হচ্ছে না।

বরং উদ্ধৃত চালের বৈচিত্র্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে। চাল প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে প্রসেসিং ফুড তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে প্রচেষ্টা চালাতে বলা হয়েছে। যে কারণে নতুন করে আরেক দফা চাল আমদানি শুল্ক আরোপ যৌক্তিক সঙ্গত মনে করে বৈঠকে সবাই এ সিদ্ধান্তে একমত দিয়েছেন।

সূত্রমতে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে খাদ্যশস্য উৎপাদন পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য তুলে ধরে বলা হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আউশের উৎপাদন ২৭ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন এবং আমনের ১ কোটি ৪০ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন চূড়ান্ত করা হয়েছে।

আর খাদ্য উৎপাদন পরিস্থিতি ভালো আছে বিধায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ অন্যান্য কর্মসূচিতে বিতরণ অব্যাহত আছে বলে ওই সভায় অবহিত করা হয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

সেখানে বলা হয় চলতি অর্থবছরের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় গরিব মানুষের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। যদিও অর্থবছরে মোট খাদ্য বিতরণের জন্য সংস্থান রাখা হয়েছে ৩০ লাখ ৫৬ হাজার টন।

আরও সংবাদ