সালমান ফরিদের কলাম-সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের উদয়ন এক্সপ্রেসের কথা বলি!
উঠেছি ফেনী থেকে। ৪ জনের ক্যাবিন। উপরে দুটা নিচে দুটা সিট। আমি একটু আগে শুতে গেলাম উপরের একটা সিটে। ফ্যানের বাতাস গায়ে আসে না। মাথার একদম কাছেই ছাদ। গরম, বাতাস চলাচল কম থাকায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। ধুলাবালি আর জরাজীর্ণ অবস্থা। যাক, কোনো রকমে শুয়ে পড়লাম।
পরে আমার সাথের একযাত্রী উঠতে গেলেন আরেকটিতে। বাঁধলো বিপত্তি। উঠতে পারছিলেন না যে, এতোটা সরু আর লোহার শিকল দিয়ে পেছনো। তবুও চেষ্ঠা করে যখন কোন রকমে উপরে উঠলেন, তখনই ছাদ থেকে সিটের লোহার শিকল ঘ্যাট করে একটা শব্দ হয়ে খুলে খসে পড়লো। অল্পের জন্য নিচে ধসে পড়েনি। আল্লাহ রক্ষা করেছেন। ভয় পেয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। সাবধানে, কোনো রকমে নিচে নেমে এলেন সেই যাত্রী! নিচে আসার পর তার মন্তব্য ছিল এরকম— এমন ট্রেন মানুষ চড়ে!!!
হ্যাঁ, মানুষই চড়ে। তারা হতভাগা এবং শুধু বাংলাদেশেরই মানুষ। যারা নিজের প্রাণের মায়া ছেড়ে এবং হাতে নিয়ে চড়েন। এবং সেই তারা প্রায়সই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। যেমনটি হারিয়েছেন পরশু! বি-বাড়িয়ায়!
এই ক্ষুদ্র জীবনে উন্নত বিশ্বসহ কয়েকটি দেশে ঘুরার সৌভাগ্য হয়ে গেছে আমি অভাগা বাঙালির। সে দেশগুলোর রেল ভ্রমণেরও সুযোগ পেয়েছি ভাগ্যগুণে। মিলাতে পারিনি! কিছুতেই মিলাতে পারিনি। আমরা কোথায় আর তারা কোথায়ও! অথচ আমাদের নাকে খঁত দেয়া। সুযোগ পেলেই বয়ান ছাড়ি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, সিডনি, লস অ্যাঞ্জেলস হয়ে যাচ্ছি!
তা দুূরে থাক, অদূর প্রতিবেশী (প্রতিবেশী মিয়ানমারের প্রতিবেশী) থাইল্যান্ডের মতোও যদি হতে চাই, তাহলে আমাদের আরও ৫০ বছর গাধার মতো খাটুনি খাটতে হবে। দৌড়াতে হবে! তারপরও শর্ত আছে। এই চোর-ডাকাত-বদমাশ রাষ্ট্রযন্ত্র আর প্রশাসন দিয়ে হবে না। পাক্কা দেশপ্রমিক, ঈমানদার লোক লাগবে!
লেখক,সাংবাদিক ও কলামিস্ট।