সম্মানের নিশ্চয়তা না পেলে বিদেশে নারীকর্মী পাঠানো হবে না: প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী
সম্মানজনকভাবে চাকরির নিশ্চয়তা না দিতে পারলে প্রয়োজনে বিদেশে নারীকর্মী পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। মঙ্গলবার সংসদে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান। খবর বাসসের
মন্ত্রী বলেন, এদেশের নারীরা যাতে সম্মানজনকভাবে বিদেশে চাকরি করতে পারে এ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। অন্যথায় প্রয়োজনে নারীকর্মী পাঠানো হবে না। জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশে বাংলাদেশি নারীকর্মী লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে সরকার আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গত কয়েক মাসে বিদেশে নারীকর্মী লাঞ্চনার দায়ে অভিযুক্ত ১৬০টি রিক্রুটিং লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে এবং তিনটি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। যারা অনিয়ম করেছে সেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি সৌদিতে কর্মী পাঠাবে তাদের সেখানে যে এজেন্ট রয়েছে, সেই এজেন্টের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা আমাদের দিতে হবে। যাতে আমরা পরবর্তীতে কোন সমস্যা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।
জাতীয় পার্টির সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর তারকা চিহ্নিত এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান আহমদ বলেন, খুব শিগগিরই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হবে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ শ্রমিক প্রেরণকারী সব দেশ থেকে দেশটিতে কর্মী নেয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ইমরান আহমদ বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু করার জন্য আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর এ পর্যন্ত তিনবার মালয়েশিয়া সফর করেছি এবং বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের বিষয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ার সারওয়াক প্রদেশে কর্মী প্রেরণ শুরু হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের বিষয়টি দ্রুততর করার জন্য এ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে গত ৫ থেকে ৮ নভেম্বর মালয়েশিয়া সফর করা হয়েছে। খুব শিগগিরই দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী গমন শুরু হবে।
মন্ত্রী জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য উন্মুক্তকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার নিয়েও শিগগিরই দেসবাসীকে সুখবর দিতে পারবো।
সরকারি দলের সদস্য মো. ইসরাফিল আলমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৭৩টি দেশে কর্মী প্রেরণ করা হয়েছে। চলতি বাজেটে (২০১৯-২০ অর্থবছরে) রেমিট্যান্সের ওপর যে ২ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাতে প্রথম ত্রৈমাসিক জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মোট রেমিট্যান্স প্রবাহ হয়েছে ৪ হাজার ৫১০.৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে একই ত্রৈমাসিকে ছিল ৩,৮৬৮.৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ডলারের হিসেবে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৬.৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকারি দলের সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান আহমদ বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদেশি কর্মী গমনের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬২২ জন কর্মী বিদেশ গমন করেছেন। পরবর্তীতে বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৩ জন কর্মী বিদেশ গমন করেন এবং ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩৪ লাখ ৮২ হাজার ২ জন কর্মী বিদেশে যান।
মন্ত্রী জানান, সম্প্রতি কর্মী প্রেরণের বিষয়ে যে সব দেশের সঙ্গে চুক্তি সমঝোতা স্মারক স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে তার মধ্যে সৌদি আরব মালয়েশিয়া, জাপান, কম্বোডিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিশেলস, মরিশাস অন্যতম।