সংসদে পেঁয়াজ নিয়ে সমালোচনা
বাজারে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বৃহস্পতিবার সরগরম ছিল জাতীয় সংসদ। এদিন অধিবেশনের পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকারদলীয় ও বিরোধীদলীয় বেশ কয়েকজন সদস্য পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান। তারা এর জন্য দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে শিগগির অভিযান চালানোর দাবি তোলেন।এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাংসদ ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ।তিনি বলেন, ‘আসলেই বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী এর আগে অনুরোধ করেছিলেন পেঁয়াজ কম খেতে। সেটাতে মানুষ সাড়া দিয়েছেন। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এজন্য দুর্নীতিবাজরা এটা করতে পারে। এটা মানা যায় না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আমি আহ্বান জানাই– এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন, যাতে পেঁয়াজের দাম কমে। মানুষের দুর্ভোগ দূর হয়।’সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘দু’দিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী বললেন পেঁয়াজের বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মন্ত্রী এ কথা বলার পরদিনই পেঁয়াজের কেজি দেড়শ টাকা হয়ে গেল। আজ (বৃহস্পতিবার) দুইশ টাকা কেজি। নিউজে দেখলাম পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় ভারতের কৃষকরা কাঁদছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের এত ভালো সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী যদি নিজে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নেন তাহলে হয়তো এ সমস্যাটা থাকত না।’তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। তারপরেও দাম বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালানো দরকার। তাহলে সমস্যাটা আর থাকবে না। সন্ত্রাসীরা ক্রসফায়ারে মারা যায়। যারা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে তাদের একজন মারা যাক না। আমি মনে করি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। এটা দেখা দরকার। জরুরি ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’চুন্নুর সঙ্গে সুর মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমও এদিন সংসদে শিল্পমন্ত্রীর সমালোচনা করেন।তিনি বলেন, “পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হলে সেটি খারাপ হবে। এতে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।”বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় উঠে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “কী কারণে প্রতিদিন পেঁয়াজের মূল্য বাড়ছে?“বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন ১০০ টাকার নিচে মূল্য নামবে না, তখন ব্যবসায়ীরা তো সুযোগ পেয়ে যান। বলা হচ্ছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। তাহলে কেন মূল্য বাড়ছে, তা বোধগম্য নয়।”নাসিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে বলেছিলেন পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়ে গেছে। তিনি ভারতকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ না করতে অনুরোধ করেছিলেন। সংসদে অর্থমন্ত্রী আছেন, বাণিজ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীকে বলব, পেঁয়াজের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আরও তৎপর হওয়া উচিৎ।”সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে, আজকে পেঁয়াজের কেজি দুইশত টাকা। আমরা কোনোদিনই এটা ভাবিনি।”তিনি বলেন, “দেশে পেঁয়াজের কী চাহিদা, তা আগেই মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। আমাদের দরকার কত? আছে কত? যেটা ঘাটতি তা তুরস্ক ও মিসরসহ অন্য দেশ থেকে আগেই সংগ্রহ কর।“যারা পেঁয়াজ আমদানি করেন তাদের সুবিধা দিন। অন্তত কিছু দিনের জন্য আমদানি শুল্ক শূন্য করে দিন। কারণ, এ ধরনের ঘোষণা দিলে দেখা যাবে এর প্রভাব বাজারে পড়ছে।”