কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ উপায়ে ভর্তির সুপারিশ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অবৈধ উপায়ে ভর্তির জন্য সুপারিশ করেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য লুৎফন নাহার বেগম লাকী।

 

বুধবার বেলা ১১ টায় ভর্তি পরিক্ষা শুরু হলে লুৎফন নাহার বেগম লাকী অন্য কোনো উপায়ে ভর্তির উদ্দেশ্যে সুপারিশ করতে প্রক্টর অফিসে যান। প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক সদস্যের উপস্থিতিতে তিনি নিজেকে বারবার আওয়ামী লীগের নেত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন। নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতাদের নাম ব্যবহার করে আফিফা হুমাইরা (রোল ১৪০৮৯) নামে একজনকে অবৈধ উপায়ে ভর্তির জন্য সুপারিশ করেন। এসময় প্রক্টরিয়াল বডির অন্যতম সদস্য, সহকারী প্রক্টর নজরুল ইসলাম উনার কথার প্রতিবাদ জানালে উক্ত মহিলা অকথ্য ভাষায় পাল্টা জবাব দেন।

 

প্রক্টর অফিস থেকে অবৈধ উপায়ে ভর্তির সুপারিশে ব্যার্থ হলে উক্ত মহিলা স্থান ত্যাগ করেন।

 

বেলা ২ টার দিকে সংবাদ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং গেইটে গেলে দেখা যায়, হাসিনা বিনিতে হাকিম নামের একজন প্রতিবন্ধী মহিলার সাথে উক্ত আওয়ামী নেত্রী পরিচয় দানকারী লুৎফন নাহার বেগম লাকির বাকবিতন্ডা চলছে ।

 

এসময় সংবাদ কর্মীরা লুৎফন নাহার বেগম লাকির সাথে কথা বললে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী, সৈয়দ আশরাফ, ওবায়েদুল কাদেরের সাথে রাজনীতি করেছি। তাই উক্ত মহিলা (হাসিনা বিনিতে হাকিম) আমাকে অনুরোধ করেন যাতে আমি সুপারিশের মাধ্যমে তার মেয়ে হুমায়রাকে ভর্তি করিয়ে দিতে পারি। এজন্য আমাকে নিয়ে আসে।

 

বাকবিতন্ডাতার কারণ জানতে চাইলে হাসিনা নামের প্রতিবন্ধী মহিলা বলেন, লাকী আমার মেয়েকে ভর্তি করিয়ে দিবে। এজন্য এক লক্ষ টাকা চুক্তি করে এবং ইসলামি ব্যাংকের একটি ফাঁকা (ব্লাঙ্ক) চেক লাকী আমার কাছ থেকে প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে নেয়। ভর্তি করিয়ে দেবার আশ্বাস দিয়ে চেক নিয়েছে, এখন চেক ফেরত চাইলে সে চেক নেয়ার কথা অস্বীকার করছে।

 

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় ভর্তি পরিক্ষা চলাকালীন কর্তব্যরত র‍্যাব সদস্যরা ২জন মহিলাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির কাছে তুলে দেয়।

 

এই বিষয়ে প্রক্টর জানান, উক্ত মহিলা সকাল বেলা প্রক্টর অফিসে এসে নানা রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে অসাধু উপায়ে ভর্তির সুপারিশ করেছিলো। আমরা তখন তাকে ফিরিয়ে দেই।

 

তিনি আরো বলেন, র‍্যাব সদস্যরা আমাদের হাতে তাদের তুলে দেয়ার পরে স্থানীয় পুলিশসহ প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করি। ভর্তি পরীক্ষায় তার অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়ে নিশ্চিত হই। যেহেতু প্রতিবন্ধী নারীর পক্ষ থেকে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আর্থিক লেনদেন নিয়ে চেক আদান-প্রদানের বিষয়ে অভিযোগ তোলা হয়, তাই বিষয়টি গভীর তদন্তের জন্য এবং প্রয়োজনীয় আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে ত্রিশাল থানা পুলিশের হাতে তুলে দেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

 

উল্লেখ্য যে, গত মঙ্গলবার ‘বি’ ইউনিটে ভর্তি পরিক্ষা চলাকালীন ভর্তি জালিয়াতি চক্রের আরো ২ সদস্য কে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আরও সংবাদ