রাজনগরে ব্রিক ফিল্ডের কর্মকান্ডে অতিষ্ট এলাকাবাসী, প্রতিকার চেয়ে আবেদন
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ১০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ইটভাটার কারনে পোহাচ্ছেন চরম দূর্ভোগ। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষের বিড়ম্বনার কারণ “কাজী খন্দকার ব্রিকস”। দূর্ভোগে অতিষ্ট হয়ে এলাকাবাসী এই সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভোক্তা অধিকার বরাবর আবেদন করেছেন।
এদিকে রাজনগর সদর ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের উপর দিয়ে ঐতিহ্যবাহি কুচিমুড়া গাঙ্গ প্রবাহিত। অত্র আঞ্চলের কৃষি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও আগাম বন্যা থেকে রক্ষা করতে ২০১৭ সালে এটি পুনরায় খনন করা হয়। সেসময় খননকৃত মাটি দিয়ে গাঙ্গের দু’পাড় বাঁধা হয়। এতে হঠাৎ বন্যার কবল থেকে কৃষি জমি রক্ষা হয়ে আসছে। কিন্তু কাজী খন্দকার ব্রিকস কর্তৃপক্ষ গাঙ্গের উপর বাঁধ নির্মাণ করে দু’পাড় কেটে সমস্ত মাটি ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। এতে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজনগর সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ বালিগাঁও ও তেলিজুরি গ্রামের পশ্চিম পাশে বুলডোজার মেশিন দিয়ে কুছিমুড়া ছড়ার পাড় কাঁটা হচ্ছে। ট্রাক ও ট্রলি গাড়ীতে ভরে এসব মাটি যাচ্ছে রাজনগর সদর ইউনিয়নের মুরালী গ্রামে অবস্থিত কাজী খন্দকার ব্রিকস নামের ইট ভাটায়। ইট ভাটায় প্রতিদিন মাটি বহনকারী ট্রাকের শব্দ আর ধুলাবালি উড়ার কারনে ৭/৮টি গ্রামের স্কুলমুখী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারী পড়েছেন বিপাকে। গ্রামের রাস্থায় এসব ভারি যান চলাচলের কারনে বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ও ভাঙনের দেখা দিয়েছে।
মশরিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী লুবনা বেগম বলেন, প্রতিদিন মাদ্রাসায় হেঁটে যাওয়ার সময় ইটভাটার ট্রাক দ্রুত গতিতে ছুটে যায়। তখন আমরা রাস্থা ছেড়ে পার্শবর্তি জমিনে নেমে পড়ি৷
বালিগাঁও গ্রামের কৃষক আলাল মিয়া, দুদু মিয়া, আয়না মিয়া বলেন, কুছিমুড়ার পাড় এভাবে নিশ্চিহ্ন করার ফলে আগামী বর্ষায় হঠাৎ পাহাড়ী ঢলে ফসলি জমিন তলিয়ে যাবে। মুরালী গ্রামের মাহমুদুর রহমান আয়ুব, বালিগাঁয়ের খালেদ হাসান, আতাউর রহমান মধু, খলিলুর রহমান লেবু , জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবছর তাদের কর্মকান্ড জনদুর্ভোগ করে আসলেও এ বছর তাদের কর্মকান্ডের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ইটভাটার বেপরোয়া গাড়ীগুলি জনসাধারনের চলাচলে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, ২০১৯ সালে অনেক তদবির করে রাস্থাটি সংস্কার করানো হয়েছে। কিন্তু মাত্র ৬ মাস অতিবাহিত হয়নি ইটভাটার মাটি ভর্তি গাড়ীর কারনে রাস্থাটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জনবসতিপুর্ণ স্থানে পরিবেশের ক্ষতিকর এমন ইটভাটা প্রশাসনের নজরে আনার দাবীও জানান তারা।
এবিষয়ে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘অভিযোগ পেয়ে আমি ইটভাটার মালিকপক্ষকে ডেকে সতর্ক করে দিয়েছি। তারা আইন মান্য করে শহীদ দানু মিয়া সড়ক ব্যবহার করতে বলেছি। ইটভাটা ও মাটি বোঝাই গাড়ির কারণে এলাকাবাসীর যাতে কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। তারা আইন না মানলে আমরা পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’