লাল ও সাদা রঙের আলস্কারিক গুল্ম ‘নাগবল্লী’
চির সবুজের মাঝে লাল ও সাদা রঙের আলস্কারিক গুল্ম মুসেন্ডা বা নাগবল্লী। স্থানীয়রা এগুলোকে বনফুল বা নাগফট বলে থাকেন। ফুল গুলোতে সুবাস না থাকলেও সবুজের মাঝে সাদা রঙের পত্র পল্লবে পথচারীদের নজর কাড়ে।
মৌলভীবাজার জেলার বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে পাহাড় টিলা আর সবুজের সমারোহ। সবুজ বনে আপন খেয়ালে সৌন্দর্য বিলিয়ে দেওয়ার জন্যই মুসেন্ডা বা নাগবল্লী জন্মায়।
মুসেন্ডা বা নাগবল্লী (বৈজ্ঞানিক নামঃ Mussaenda frondosa) Rubiaceae পরিবারের মুসেন্ডা গনের লাল ও সাদা রঙের আলস্কারিক গুল্ম। প্রচলিত ইংরেজী নাম Dwarf Mussaenda, White Wing ইত্যাদি। রোদ বা আংশিক ছায়ায় এ গাছ তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠে। নাগবল্লী বর্ণবৈচিত্র্য তৈরীতে সৌন্দর্য প্রেমিদের আদর্শ বাগানের জন্য উত্তম।
ঝোপের ভেতর ছোট আকৃতির চিরসবুজ গাছ। সাধারণত দুই থেকে তিন ফুট উঁচু হতে পারে। পাতার রং উজ্জল সবুজ, এর উপর সাদা সাদা পাতা রয়েছে, প্রায় চার সেন্টিমিটার লম্বা হলুদ রঙের ফুল। এক ঝোপে অনেকটি ফুল রয়েছে।
জানাযায়, মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানের ঝোপঝাড়ে মে ও জুন মাসে মুসেন্ডা বা নাগবল্লী ফুটে। নাগবল্লী বাংলাদেশ ও ভারতীয় প্রজাতির বনফুল। এটি ক্রান্তীয় আফ্রিকারও গাছ। তবে এদের দেশীয় করণ হয়েছে নেপাল, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন জায়গায়। আশির দশকে ঢাকা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পিছনের ঝোপে দেখা গিয়েছিলো এই নাগবল্লী। তখন এফুল বিভিন্ন ক্যালেন্ডারেও স্থান পেয়েছিলো।

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় জেলার রাজনগর উপজেলার উদনা ছড়া, ইটা চা বাগান, রাজনগর চা বাগানের বাসিন্দা প্রদীপ যাদব, সুরুজ মিয়া, সিপন মিয়া ও পায়েল আহমেদের সাথে। তারা বলেন, স্থানীয়ভাবে আমরা একে নাগফট ফুল বলি। বর্ষা মৌসুমে ফুলের সমারোহ কমে যায়। এ সময় মুসেন্ডা বা নাগবল্লী ফুটে প্রকৃতিকে সুন্দর করে সাজায়। এ ফুলে ঘ্রাণ না থাকলেও দেখতে খুব সুন্দর লাগে। ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে।
উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ মাথিউড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক ইবাদুল ইসলাম ও কৃষিবিদ শেখ আজিজুর রহমান জানান, এটি সিলেট ও চট্রগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে তিন প্রজাতির কয়েক ধরনের নাগবল্লী দেখা যায়। মৌমাছি, প্রজাপতি ও কোন কোন পাখির পছন্দ উপকারি বনফুল মুসেন্ডা বা নাগবল্লীকে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। সৌন্দর্য প্রেমিরা নিজ বাগানে বৈচিত্র আনার জন্য মুসেন্ডা বা নাগবল্লী সংগ্রহ করে রোপন করতে পারেন। কলম ও বীজে এর বংশ বৃদ্ধি হয়।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান