মায়ের দুধ আর পান করা হলোনা ৭ দিনের শিশুটির!
ঈদের দিনে লিমা আক্তারের (২১) সংসারে আসে ফুটফুটে এক কন্যা শিশু। কিন্তু জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পানের সুযোগ হয়ে ওঠেনি নবজাতকের। এর আগেই এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ঘুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন লিমা আক্তার। আনন্দের মাঝেও প্রিয়জন হারানোর শোকের ছায়া নেমে এসেছে তাদের পরিবারে। করোনার ভয়াল থাবা মাকে কেড়ে নিয়ে শিশুটিকে করেছে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৯টায় সিলেটের নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিমা আক্তারের মৃত্যু হয়। পরে উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের ডেফলউড়া গ্রামে রাত সাড়ে ৩ টায় জানাযা শেষে সামাজিক সংগঠন ইকরামুল মুসলিমীন মৌলভীবাজার মৃতের লাশ দাফন করে। তিনি ঐ গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী। তার ৫ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
বুধবার দুপুরে মৃত লিমা আক্তারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নবজাতক শিশুটিকে বিছানায় শুইয়ে ফিডার খাওয়াচ্ছেন তার এক ফুফু। শিশুটির দাদা লকুছ মিয়া পাশেই ছিলেন। তিনি বলেন, সন্তান সম্ভবা লিমা আক্তারকে ঈদের আগে মৌলভীবাজারের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এসময় তার করোনার উপসর্গ দেখা দিলে গাইনি ডাক্তার করোনা টেস্ট করানোর জন্য বলেন এবং সেখান থেকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে রেফার্ড করেন। নমুনা দেয়ার তিনদিন পর লিমা আক্তারের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখান থেকে সিলেট রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজে নিয়ে গিয়ে সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন লিমা আক্তার। সন্তান জন্ম দেয়ার পর তার অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে। প্রয়োজন হয় আইসিইউর। সেখান থেকে সিলেট মা ও শিশু হাসপাতাল ও পরে মঙ্গলবার দিনে নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ঢুকানোর পর আস্তে আস্তে তার অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকে। পরে রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রাতেই লিমা আক্তারের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরে ইকরামুল মুসলিমিন মৌলভীবাজার রাত সাড়ে তিনটার সময় লাশ দাফন করে।
লকুস মিয়া অভিযোগ করে বলেন, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চাইলে চিকিৎসা করতে পারতো। সেখানে নার্স-ডাক্তাররা এসে ঠিকমতো দেখেও না। নার্সদের তো আনাই যায়না।
শিশুটির দাদী সালমা বেগম বলেন, আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। মা ছাড়া সাত দিনের শিশুটিকে কীভাবে লালন পালন করবো?
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান