প্রথম প্রেম দিবস!

এফ এস সোহানা সরকারপ্রেম এক অদৃশ্য অনুভূতি। একটা মানুষ কখন যে মনের অজান্তে অপর জনের প্রেমে পরে যায় সেটা সে নিজেও জানে না। প্রেম এর সংজ্ঞা এক এক জনের কাছে এক এক রকম। প্রেম বা ভালবাসা হচ্ছে এক কথায় অদৃশ্য অথচ স্বচ্ছতায় তৈরি এক বস্তু, যা শ্রদ্ধা, আবেগ, সহানুভুতি, স্নেহ, বিশ্বাস এর সমন্বয়ে তৈরি। যা দুটি মনকে একত্র করে। দুটি মানুষকে পাশাপাশি রাখে। জীবনে প্রেম এ পরে নি এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। সবার জীবনেই প্রেম আসে, হয়তো কোনো এক সুন্দরী ললনা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে আপনি তার হাসির প্রেম এ পরলেন, কিংবা কোনো নীলাঞ্জনার লম্বা কালো খোলা চুল, কপালে লালটিপ, চোখের কাজল এ চাওয়া সুন্দর ২টি চোখ দেখে আপনার মধ্যে অন্য এক অনুভূতি সৃষ্টি হলো, কিংবা কারো কথা আপনার ভীষণ ভাল লাগে, কারো ব্যক্তিত্ব আপনাকে মুগ্ধ করে,ইচ্ছা করে তাকে একটু দেখি,কথা বলি,সেই মানুষ টার সাথে সময় কাটাতে আপনার ভাল লাগে,তাকে মনে মনে অনুভব করেন এভাবেই এক এক জনের প্রেম এর অনুভূতি তৈরি হয়।

প্রেম এর ইতিহাস বহুকাল ধরেই। নচিকেতার সেই বিখ্যাত গান” সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা ”
অথবা কাজী নজরুল এর সেই বিখ্যাত গান
“তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় ,
সে কি মোর অপরাধ ?
চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিনী,
বলে না তো কিছু চাঁদ । ”

এখানেও আমরা প্রেমের আভাস দেখতে পাই। কারো কারো মতে প্রেম চির অমর। প্রেম আছে বলেই তো জীবন এর অনুভূতি গুলো এমন।

আজ ১৮ ই সেপ্টেম্বর প্রথম প্রেম দিবস। ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দিবস টি পালন করা শুরু হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর এই দিনে দিবস টি পালিত হয়ে থাকে।

“যৌবনে যার প্রেম হল না তাঁর জীবন বৃথা ।” – শংকর।
“প্রেমের অকাল মূত্যু নেই বলে শোকের মধ্যে প্রেম চিরন্তন হয়ে যায়।“

এমন অনেক কবি সাহিত্যক কিংবা মনীষীগণ প্রেম কে এক এক ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। প্রেম এর কোন বয়স হয় না। মানুষ যে কোনো বয়সে প্রেম এ পরতে পারে। হয়তো কারো জীবনে প্রেম আগে আসে কারো জীবনে পড়ে। লাইলি-মজনু, সেলিম-আনারকলি কিংবা সম্রাট শাহজাহান-মমতাজ এর প্রেমের ইতিহাস সবার ই জানা। প্রেম এর জন্য মানুষ কি না করতে পারে।

১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে আরজুমান বানু নামক এক বালিকার সঙ্গে ১৫ বছরের শাহজাহা্নের বিয়ে হয়। পরে কিনা যিনি মোঘল সম্রাজ্য পরিচালনা করেন। সম্রাট শাহজাহান তাঁর ১৪ সন্তানের জননী এবং প্রিয়তম স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মমতাজ । ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্থাপত্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল, প্রায় ১ হাজার হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল এবং সেই স্থাপত্যের নির্মাণ কাজ শেষ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছিল। তাজমহলের নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই শাহ -জাহান তাঁর পুত্র আওরঙ্গজেব দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও আগ্রার কেল্লায় গৃহবন্দী হন। শেষ বয়সে সাম্রাজ্য হারিয়ে বন্ধী জীবন কাটিয়ে ছিলেন। তাই সেই অনিন্দ্য সুন্দর কালো মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। যমুনাতীরে যেখানে “তাজমল” গড়ে ওঠেছিল, শেষ জীবনে শাহজাহান ওখানে একাকী সময় পার করেছেন। মৃত্যুর পর তাঁকে সেখানে সমাহিত করা হয়। তাঁর ভালোবাসার নিদর্শনে তিনি রেখে যান, পৃথিবীর সপ্তাচার্যের মাঝে একটি “তাজমহল!”
তাই তো বলা হয়ে থাকে প্রেম অন্ধ। এভাবেই নানা ঘটনায় ইতিহাসে প্রেম চির অমর হয়ে আছে।

প্রেম মানে না জাতি ধর্ম, প্রেম মানে না সমাজ, তাই প্রেমের টানে ইতিহাসের শুরু থেকেই পৃথিবীতে ঘটেছে অবিস্মরণীয় সব ঘটনা। প্রেমের টানে সিংহাসন ছেড়ে পথিক হয়ে গেছেন কেউ কেউ, প্রেমের টানেই কেউবা আবার আপন করে নিয়েছেন পৃথিবীর সব দুঃখ-গাথা।কেউ কেউ তার প্রথম প্রেম সফল হয় কেউ বা ব্যর্থ । কেউ বা প্রেম এ পরে অনেক কিছু বুঝতে শিখে,প্রেম কারো জীবনে সুখের কারন কারো জীবনে দুঃখের। প্রেমের সঠিক সংজ্ঞা কেউ ই দিতে পারেন নি।

প্রেম এর কি আদও কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে কি?
বিজ্ঞানীরা প্রেমে পড়া মানুষের ব্রেনের সাথে কোকেনে আসক্ত মানুষের ব্রেনের মিল খুজে পেয়েছেন।প্রেম ভালবাসার পেছনে কিছু হরমোনাল ব্যাপার কাজ করে ।দেখা গেছে প্রেমে পড়া মানুষের মস্তিস্কে ডোপামিন , নরেপিনেফ্রিন এসব হরমন বেড়ে যায়। ডোপামিনের লেভেল বেড়ে গেলে আপনার ভাল লাগার অনুভূতি বেড়েযায়, আপনার মধ্যে যেন অনেকশক্তি এসে ভর করে, খিদে কমে যায় একাগ্রতা বেড়ে যায় এবং ঘুম কমে যায়। মস্তিস্কের প্লেজার সেন্টার সহজেই উত্তেজিত হয়।তাই আপনি প্রিয়জনের যা দেখেন তাই ভাল লাগে। সহজেই ইম্প্রেসড হয়ে যান।

একটি গবেষনায় দেখা গেছে, যেসব জুটির মধ্যে অক্সিটোসিনের লেভেল বেশি তাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া , সামাজিক যোগ ,একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা এসব বেশি এবং ভুল বোঝাবুঝির প্রবণতা কম। যা একটা লংটার্ম রিলেশশিপের জন্য খুব দরকার।
যখন কাউকে ভালবাসি তখন সবসময় তার কথা ভাবতে ইচ্ছে করে ।তার প্রতি তৈরি হয় একধরনের অবসেশন। দেখা গেছে প্রেমে পড়া মানুষের সেরোটোনিন লেভেল কমে যায়। যেমনটা হয় অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজরডার এর মানুষের মধ্যে।

সত্যি প্রেমের অনুভূতি এক অদ্ভুত অনুভূতি। প্রেমে পড়লেও জ্বালা আবার এর স্বাদ না নিলেও যেন মন ভরে না। তবে হরেক রকমের প্রেম বর্তমান আমাদের এই দুনিয়ায়। প্রেমে পড়ার সঠিক কোনও বয়সই হয় না। তাই যখন ইচ্ছা তখনই পড়া যেতেই পারে। জীবনের বিভিন্ন পর্যায় এসে প্রেমের বিভিন্ন সংজ্ঞার মানে বোঝা যায়।
পরিশেষ এ সেই উক্তিটিই বলতে হয়, প্রথম, দ্বিতীয় প্রেম বলে কিছু নেই মানুষ যখন প্রেম এ পরে তার প্রতিটি প্রেম ই প্রথম প্রেম।

লেখিকাঃ এফ এস সোহানা সরকার

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান 
আরও সংবাদ