কুলাউড়ার আব্দুল কাইয়ুম – একজন স্বপ্নবাজ তরুন ফ্রিল্যান্সারের গল্প
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। সেখানে ছিলো না ভালো ইন্টারনেট ব্যবস্থা, কম্পিউটার চালানোর মতো পর্যাপ্ত ইলেকট্রিসিটি। এই গ্রামেরই ছেলে আব্দুল কাইয়ুম। যে কিনা স্বপ্ন দেখে অনেক বড় হওয়ার। তাই সে সকল বাধাকে উপেক্ষা করে ছুটে চলেছে স্বপ্ন বাস্তবায়নে লক্ষ্যে।
২০১৬ সালে কুলাউড়া ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন আব্দুল কাইয়ুম। পরে ডিগ্রী ১ম বর্ষে পড়ালেখাকালীন সময় বড় ভাইয়ের সাথে ব্যাবসায় হাল ধরেন। তখন আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তার। ২০১৯ সাল থেকে জড়িত আছেন ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে। যদিও একজন ফুল টাইম ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন ২০২০ এর প্রায় শেষের দিক থেকে।
আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ইউটিউবের সাহায্যে জানতে পারি অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করা যায়। তাই বাংলাদেশের একটা স্বনামধন্য প্রতিষ্টানের অনলাইনে ওয়েব ডিজাইন কোর্সে এডমিশন হয়েছিলাম ২০১৯ সালের জুন মাসে। অথচ আমার বাড়িতে বিদ্যুতের ভোল্টেজ সমস্যার কারনে পিসিও চলে না। আমার এখনো মনে আছে সেই টাইমে আমার দোকানের সাটার বন্ধ করে দোকানের ভিতরে সপ্তাহে দুইদিন দুই ঘন্টার বেশি সময় করে ক্লাস করতাম। মাঝে মাঝে ভাবতেও গা শিউরে উঠে যে তখন ক্লাসের এসাইনমেন্ট ও কাজ প্রেকটিসের জন্য ছোটভাইকে নিয়ে রাত্রে দোকানেই থাকতাম ও ফ্লোরেই ঘুমাতাম।
রাস্তার পাশেই দোকান হওয়ায় অনেক ভয় লাগতো প্রতি রাতেই। কিন্তু তাও প্রতিদিন দোকানেই থাকতাম। কারন বাসায় বিদ্যুতের সমস্যা আর ইন্টারনেটের সমস্যা তো ছিলোই। রাতে দোকানে প্রেকটিস ও ঘুম দিয়ে আবার সকাল থেকে সারাদিন দোকান খুলে বসতে হতো। ঐ সময়টায় আমার মনে হয় না ৪-৬ ঘন্টার বেশি ঘুম হয়েছে কোনোদিন। এভাবেই শুরু হয় আমার স্কিল ডেভেলপমেন্ট।
ক্লাস চলাকালীন ২০১৯ এর অক্টোবরে মেন্টরের গাইডলাইন নিয়ে ফাইভারের একাউন্ট করি। প্রোফাইল সাজাই, গিগ করি ও চেষ্টা চালিয়ে যাই। কিন্তু কাজ পেতে পেতে আরো প্রায় ৪ মাস চলে যায়। আর পাবোই বা কিভাবে। তখনকার গিগের ফাইলগুলো দেখলে এখন মন খারাপ থাকলেও হাসি চলে আসে।
বর্তমানে কাজ করছেন একজন ইমেইল মার্কেটার ও ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে। তবে তার ইচ্ছে হলো ফিউচারে একজন ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ করার। তাই সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছেন।। তিন বছরের এই ক্ষুদ্র জার্নিতে আব্দুল কাইয়ুমের অর্জন উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের টপ মার্কেটিং প্লাটফর্ম আপওয়ার্কে টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার ও ফাইভারে তিনি টপ রেটেড নোমিনেটেড সেলার হিসেবে কাজ করছেন।
ফ্রিলান্সিং করে সফলতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিং করে কি করতে পেরেছি জানি না। তবে নিজের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে বাস্তব করতে পারছি। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে হিসেবে একসময় অনেক দোয়া করতাম যেনো ফ্যামিলিতে কোনোভাবে সাপোর্ট করতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ দোয়া কবুল হয়েছে বলেই এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে।
কাইয়ুম জানান, যেই বয়সে আমার ফ্রেন্ডরা খেলাধুলায় ব্যস্ত বা কেউ প্রেম-ভালোবাসায় ব্যস্ত ছিলো। একই বয়সে আমার ফ্যামিলি থেকে ফোকাস দিয়েছিলো আমাদের ক্যারিয়ারের দিকে। যেই সময় তারা ট্যুর-পিকনিক দিতো। সেই সেময়ে তাদের এসব দেখে আমারই আফসোস হতো। অথচ বর্তমানে তারা কেউ চাকরির পিছনে ছুটছে বা কেউ এখনো লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত। আর আমি কাজ করছি আর ভাবছি নিজে কাজ করার পাশাপাশি কিভাবে আরো কাউকেও কাজ দেয়া যায়।
ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি আমি একজন ভ্রমন পিপাসু মানুষ। সময় পেলেই ঘুরতে বের হই কাছে কিংবা দূরে। পাশাপাশি ফটোগ্রাফি করতে অনেক ভালো লাগে। যদিও আমি প্রফেশনালভাবে ফটোগ্রাফার না। তবুও চেষ্টা করছি ফটোগ্রাফি শিখার।
জানি সফলতা অনেক দূর। তাই আপনাদের কাছে অনেক অনেক দোয়া চাই যেনো কোনো একদিন নিজেকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনাদের মাঝে পরিচয় দিতে ও সফলতার গল্প তুলে ধরতে পারি।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান