মাকে ফেলে গেলো সন্তান, খাদ্যের অভাবে ছটফট
বাবাগো আমারে বাঁচাও৷ আমার ছেলেডাও আমারে রাইখা চইলা গেলোগা৷ পাঁচদিন ধইরা খাইয়া না খাইয়া খোলা আকাশের নিচে পইরা রইছি৷ আমারে তুমরা বাঁচাও৷ আমার ভাই দেশের জন্য যুদ্ধ করছে। এভাবেই কথাগুলো বলে কেঁদে কেঁদে বিলাপ করছিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা গুলেছা বানু।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পাঁচদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে আছেন তিনি৷ খাদ্য-বাসস্থান ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে সময় কাটছে তার৷
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেতাল বাজার সংলগ্ন মসূয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দোকানের বারান্দায় শুয়ে আছেন বৃদ্ধা। পাশেই রাখা মুড়ির পুটলা ও পানি। গতরাতে খোলা স্থানে শুয়ে ছিলেন৷ বৃষ্টি হওয়ার পর বাজারের পাহারাদার দোকানের বারান্দায় রেখে যায়৷ স্বাভাবিক কথা বলতে পারলেও বয়সের ভাড়ে চলাফেরা করতে পারেন না। মাঝে মধ্যে মানুষের দেওয়া কিছু খাবার খাচ্ছেন। অধিকাংশ সময় খোদা নিয়েই পার করতে হচ্ছে৷ দেখভাল করার কেউ নেই।
একই ইউনিয়নের বৈরাগিচর গ্রামে তার বাড়ি৷ বৃদ্ধা গুলেছা বানুর বড় ভাই মৃত ফালু ফকির ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ স্বামী বাতেন ফকির পাঁচবছর আগে মারা যায়৷ তিনি ছিলেন ইউনিয়ন শ্রমীক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক৷ এর পর থেকে একমাত্র ছেলে হোসেন তার দেখাশোনা করতেন।
স্বামীর সাথে ভুমিহীন এই দম্পতি ৩০ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তার পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস করতেন৷ স্বামীর মৃত্যুর পরও এখানেই ছিলেন। ছেলে ভবঘুরে হওয়ায় মাকে সহ্য করতেন না৷ প্রায় সময় অত্যাচার করতেন৷ গত বৃহস্পতিবার ছেলে মাকে বলে উধাও হয়ে যায়৷ এতেই বিপাকে পড়েন এই বৃদ্ধা৷ পরিত্যক্ত ভবনে বৃষ্টির পানি জমায় সেখানেও থাকতে পারছেন না৷ ফলে বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে কাটছে দিন৷
বৃদ্ধা গুলেছা বানু বলেন, একমাত্র ছেলে হোসেন প্রায় সময় আমাকে অত্যাচার করতো৷ আমি কেনো মারা যাচ্ছিনা তাই বলতো৷ ঈদেও একটু ভালো খাবার দেয়নি৷ আমার সাথে আর নেই বলে পাঁচদিন আগে ফেলে চলে গেলো৷ এখন আমি কোথায় থাকবো, কি খাবো জানিনা৷ আমি মরলে লাশ যেনো এই ছেলে না ধরে৷’
মাসূয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু বাক্কার বলেন, ‘আমি নিজেও অসুস্থ। খুঁজ নিতে পারিনি৷ কি করা যায় ভাববো। ইউএনও সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাবো বিষয়টি৷’
সার্বিক বিষয়ে কথা হলে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘আপনার থেকেই জানলাম বিষয়টি৷ আমি নিজে গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় কি করা যায় তাই করবো৷’