করোনা ভাইরাস নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা
সম্ভাব্য করোনায় আক্রান্ত একজন ব্যক্তির সাথে কথা বলে কিছু অভিজ্ঞতা হলো। সেগুলো সবার স্বার্থে সিয়ার করলাম।
প্রথমেই বলে রাখি এটা সঠিক হতে পারে আবার নাও হতে পারে কারণ উনি কোন ডাক্তার দেখাননি বা টেস্ট করেননি। এর পিছনে অনেক কারণ আছে। তবে করোনা ভাইরাসের যে লক্ষণগুলো ডাক্তার বা বৈজ্ঞানিকরা বলছেন সে গুলো উনার মধ্যে ছিল বলে মনে হয়েছে! তাহলে শুরু করা যাক আসল কথাগুলো ….
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম।
উনিঃ ওয়া আলাইকুমস সালাম।
আমিঃ শুনেছিলাম আপনার শরীর কিছু খারাপ ছিল। কি হয়েছিল আর এখন কেমন আছেন?
উনিঃ আল-হামদুলিল্লাহ ছুম্মা আল-হামদুলিল্লাহ!
অগণিত শুকরিয়া যিনি আমার খালিক ও মালিক, যিনি জীবন ও মরণ দাতা, যিনি রুগ ও শীফা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন ও আমার ভালো মন্দ একমাত্র তিনিই নির্ধারণ করেন সেই মহান মালিক রাব্বুল আলামীনের। যিনি আমাকে আজ চার সপ্তাহ পর মনে ও শরীরের দিক দিয়ে সুস্থতা অনুভব করার মত অবস্থায় রেখেছেন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি আমার মা জননী, পীর ও মুর্শিদ আল্লামা ইমাম উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী সহ আপনারা যারা জেনে দোয়া করেছেন।
আমিঃ আপনার এই অবস্থা অথচ তেমন কাউকে জানাননি। কেন জানাননি?
উনিঃ দেশে আমার মা জননী সহ ভাই বোন বা বন্ধুদের বেশি বলিনি। কারণ সবাই আতঙ্কিত হয়ে পেরেশানী করবেন। আর বিশ্বাস ছিল, না বললেও সবাই এমনিতেই সবার জন্য দোয়া করছেন এই মহা মসিবতের সময়। বিশেষ করে মা জননী এমনিতেই সন্তানের জন্য সব সময় দোয়া করেন।
আমিঃ এটি আসলে একদিক দিয়ে ভালো করেছেন। যাইহোক আপনার মূলত কি হয়েছিল? যদি একটু বলতেন।
উনিঃ গত পনেরো মার্চ রবিবার সকাল থেকে ……
—গলায় প্রচুর ব্যাথা অনুভব করি। যেটা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। এই অবস্থা ছিল পরবর্তী শুক্রবার পর্যন্ত।
—এর পর জর চলে আসে প্রচুর এবং আমি ভয় পেয়ে যাই। তাই নিজ থেকে ঘরে থাকার ইরাদা করি যেটা আজ পর্যন্ত করে যাচ্ছি। যদিও খুব জরুরি কাজে তিন চারবার বের হয়েছি।
—পরের দুই তিন দিন জর, গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা ও বুকের ব্যাথাসহ শরীরের ব্যাথা বেড়ে যায়। এবং খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। এভাবে কয়েকদিন চলেছে।
—বিশেষ করে তিন নম্বর সপ্তাহ রাতের বেলায় কোন ঘুম হয়নি। কারণ গলা থেকে বুক পর্যন্ত শুকিয়ে যেত। শ্বাস বন্ধ হয়ে যেত প্রায়। সাথে শুকনো কাশি হত। ঘুমানোর কোন উপায় ছিল না, বসে শুধু গরম পানি পান করে রাত পার করতে হতো।
—এই সপ্তাহ তথা চার নম্বর সপ্তাহে এসে কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে। তবে ভয় হচ্ছে কিছুটা কারণ লন্ডন সহ সারা পৃথিবীতে এখনও প্রতিদিন শত শত মানুষ চলে যাচ্ছেন আমাদের ছেড়ে।
আমিঃ আপনার যখন এরকম কষ্ট হচ্ছে। আবার ডাক্তারও ডাকেননি। তাহলে কি করলেন সুস্থ হওয়ার জন্য?
উনিঃ এই সময়ে সুস্থ থাকতে যা করেছি…….
আল্লাহর অশেষ দয়ায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পর মাসনুন দোয়া গুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়েছি,
পীর ও মুরশিদের বলে দেওয়া কুরআন হাদিসের দোয়া পড়েছি। আর মালিকের কাছে তাঁর হাবিব (সাঃ) এর উছিলা নিয়ে ফরিয়াদ করেছি তিনি যেন আমাকে হেফাজতে রাখেন, আমার বিবিসহ ছেলে মেয়েকে হেফাজতে রাখেন, দেশের বাড়িতে আমার মা জননী সহ ভাই বোনদের হেফাজতে রাখেন। সর্বোপরি মুসলিম উম্মার হেফাজত চেয়েছি এবং বিশ্বে শান্তি কামনা করেছি। যদিও আমি গুনাহগার কিন্তু বিশ্বাস ছিল মালিকের রহমতের চেয়ে অনেক কম গুনাহ আমার। তাই সব সময় মালিকের রহমতের ভিক্ষা চেয়েছি। এবং বিশ্বাস তিনি রহম করেছেন।
আমিঃ আর কি কিছু করেননি?
উনিঃ এরপর ডাক্তার ও বৈজ্ঞানিকদের বিভিন্ন পরামর্শ অনুযায়ী যে কাজগুলো করেছি ……
—বার বার (সাবান পানি দিয়ে) হাত দুয়েছি।
— প্রতিদিন গোসল করেছি।
— গরম পানি ও লেবুর রস পান করেছি।
— লবণের পানি দিয়ে গড়গড়া করেছি।
— আদা দিয়ে লাল চা পান করেছি।
— Lemsip max পান করেছি।
_ Paracetamol খেয়েছি সকাল বিকাল।
— কালিজিরা ও মধু খেয়েছি।
— মধুর সাথে রসুন মিশিয়েও খেয়েছি।
— জমজমের পানি পান করেছি।
— আজওয়া খেজুর খেয়েছি।
— সব সময় শরীরের তাপমাত্রা উষ্ণ রাখার চেষ্টা করেছি।
_ তিন চারদিন পর পর hot bath করেছি।
— সব সময় খাবার খেয়েছি যাতে শরীর দুর্বল না হয়।
— ১০০% সম্ভব না হলেও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছি।
আমিঃ তাহলে ভালোই কাজ করেছেন নিজে নিজে। এখন আপনার কেমন লাগছে বা কি করছেন?
উনিঃ আল-হামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে শরীরের অবস্থা একটু উন্নতির দিকে আছে। তবে পুরোপুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য ঘরে বসে আছি।এবং বিগত চার সপ্তাহ ধরে যে কাজ গুলো করে আসছি সেগুলি কনটিনিউ করছি।
আমিঃ অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে (সম্ভাব্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত) আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে আমাদের সচেতন হওয়ার উৎসাহ দিয়েছেন। আল্লাহর দরবারে দোয়া করি আমরা সবাই যেন একটু সচেতন হতে পারি এই করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। বিশেষ করে মালিকের দিকে যেন আমরা প্রত্যাবর্তন করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়ত ও হেফাজত করুন। বিশ্বের মাঝে আবারো শান্তি ফিরিয়ে দিন। (আমিন)
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান