এন্ড্রু কিশোর ক্যানসারে আক্রান্ত, চলছে কেমোথেরাপি
বিনোদন ডেস্ক:
দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের শরীরে ক্যানসার ধরা পড়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে তার ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসার প্রথম ধাপে তাকে কেমোথেরাপি দেয়া হচ্ছে বলে জানান সংগীতশিল্পী জাহাঙ্গীর সাঈদ।
গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন এন্ড্রু কিশোর। এসময় সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী এবং সংগীতশিল্পী জাহাঙ্গীর সাঈদ। জাহাঙ্গীর সাঈদ ঢাকায় ফিরেছেন।
তিনি বলেন, এন্ড্রু কিশোরের কিডনি ও হরমোনজনিত সমস্যা ছিল। এ কারণে তার ওজন হ্রাসসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এড্রেনাল গ্লান্ড বড় হয়ে গেছে। পাশাপাশি তার আরেকটি সমস্যা হলো জ্বর। প্রতিদিন তার জ্বর আসায় চিকিৎসকেরা চিন্তিত ছিলেন। কেন এভাবে জ্বর আসছে, তার সমাধান খুঁজছেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া তার শরীরের কিছু নমুনা বায়োপসির জন্য পাঠানো হয় ল্যাবে। সে রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন এন্ড্রু কিশোর ক্যানসারের ভুগছেন।
আজ রোববার সকালে (২২ সেপ্টেম্বর) চিত্রনায়ক ওমর সানি এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে দেখা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘সিঙ্গাপুরে আসলাম দাদার সঙ্গে দেখা হবে না? এন্ড্রু কিশোর অনেক কথা বললেন। তার কেমো শুরু হয়েছে। সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে আসুন দাদা।
সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এন্ড্রু কিশোরকে আমন্ত্রণ জানান। এ সময় তিনি এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক সমস্যার খোঁজ নেন এবং তার হাতে ১০ লাখ টাকার চেক তুলে দেন। জানা গেছে ইতিমধ্যে একটি বেসরকারি চ্যানেলের কর্তৃপক্ষ শিল্পীর চিকিৎসায় সহায়তায় আরও ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘অনুদান নয়, আমরা প্রতিদান স্বরূপ এন্ড্রু কিশোরের বিপদের সময় পাশে থেকেছি। বাংলা গানে বিশেষ করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে তার অবদান অসামান্য। আমাদের দায়িত্ব তিনি না চাইলেও তার পাশে থাকা। শিল্পীসমাজ নিজেদের উদ্যোগে তার চিকিৎসার সহায়তার তহবিল গঠনের কাজ করেছে।
এন্ড্রু কিশোর ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। মা স্কুল শিক্ষিকা মিনু বাড়ৈ তাঁর প্রিয় শিল্পী কিশোর কুমারের নামের সঙ্গে মিল রেখে সন্তানের নাম রাখেন। শখের বশে রাখলেও তিনি হয়তো ভাবেননি যে তাঁর এই সন্তানই হবে বাংলা চলচ্চিত্রের গানের ইতিহাসের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। রাজশাহীতে কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীত পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’ প্রভৃতি। এন্ড্রু কিশোর আট বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। কয়েজন বন্ধুর সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ‘প্রবাহ’ নামে একটি নির্মাণ ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন। তবে সেটি একসময় বন্ধ হয়ে যায়।