মৌলভীবাজার আওয়ামী লীগে মান-অভিমান, সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা

সুরমা নিউজ:
মৌলভীবাজার জেলা কমিটিতে স্থান পাওয়া না পাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আছে মান-অভিমান। পুরনো গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব আছে এখনো। ক্ষমতাসীন দল হওয়ায় সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার ক্ষোভও আছে কারও কারও মাঝে। সবমিলিয়ে মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে হ-য-ব-র-ল অবস্থা! এমনটাই বলছেন দলটির তৃণমূলের কর্মীরা। কিন্তু জেলার দায়িত্বশীল নেতারা এসব অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি- দল এখন অতীদের যেকোনো সময়ের চেয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সুসংগঠিত। জেলায় সবক’টি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক তৎপরতায় মনোযোগী, উজ্জীবিতও। দলে শৃঙ্খলা ফিরেছে। উপজেলা ও পৌরসভায় নতুন নতুন কমিটি হচ্ছে। বিগত নির্বাচনে জেলার ৪টি আসনে জয় পাওয়াকে সাংগঠনিক সক্রিয়তার ‘বাস্তব উদাহরণ’ হিসাবেও সামনে রাখতে চাইছেন নেতারা।

জেলার রাজনীতি নিয়ে অনুসন্ধানে এ চিত্র মিলেছে। সাধারণ কর্মী থেকে নেতৃস্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে মানবজমিনের। তারা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। কেউবা নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়েছেন। জানিয়েছেন তাদের ক্ষোভ-অভিমান আর হতাশার কথা। তাদের ভাষ্য মতে, ভোটের রাজনীতিতে বরাবরই এগিয়ে থাকা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান এখন অনেকটা নীরবে-সরব! নতুন নেতৃত্ব আসার পর জেলাজুড়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও চাঙ্গা হওয়ার  আশা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। তাদের অভিযোগ- জেলা কমিটি একপেশে, এক গ্রুপের পোয়াবারো অবস্থা। অন্য গ্রুপ কোণঠাসা। ত্যাগী নেতাদের কমিটিতে উপযুক্ত মূল্যায়ন হয়নি। আত্মীয়করণ এবং স্বজন-প্রীতির অভিযোগও রয়েছে। সভাপতি ও সম্পাদকের পছন্দের লোক এমনকি ‘উপযুক্ততা’ নেই এমন ব্যক্তিও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে গেছেন রহস্যজনক কারণে। ফলে কমিটি থেকে বাদ পড়া অনেকে হতাশায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন।  কমিটি গঠনের পর বঞ্চিতদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া-ক্ষোভ দৃশ্যমান হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অবশ্য এটি অনেকটাই ছাইচাপা পড়েছিল কমিটির প্রথম পরিচিতিমূলক ও সাধারণ সভার মাধ্যমে। কিন্তু পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। ফলে বঞ্চিতদের মনের ক্ষত আরও বেড়েছে। কমিটিতে স্থান না পাওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য, শিল্পপতি-শিক্ষানুরাগী এমএ রহিম সিআইপি বলেন, ‘ছাত্রলীগ থেকে জাতির জনকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজ অবধি আওয়ামী লীগে আছি।

ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশ-বিদেশে নেত্রীর মুক্তির জন্য কাজ করেছি। জেলজুলুম সহ্য করেছি। কিন্তু দলের কর্মীও নয়- এমন অনেকেই দলে স্থান পেলেও আমাকে জেলা কমিটিতে রাখা হয়নি’। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল বলেন, সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মতামত উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে একটি বলয়ের হাতে জেলা কমিটি তুলে দেয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশই ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, যারা দলের সুবিধাভোগী লুটেরা তাদের হয় প্রমোশন। আর আমরা যারা দলের জন্য নিবেদিত সৎ ও স্বচ্ছ রাজনীতি করি তাদের হয় ডিমোশন। সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর সহধর্মিণী সৈয়দা সায়রা মহসীন বলেন, কিভাবে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন? মরহুম মন্ত্রীর স্মরণসভাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে তাদের দাওয়াত দিয়েও পাওয়া যায় না। তারা প্রয়াত মন্ত্রীর সমর্থক, ভক্ত ও অনুসারীদের কিভাবে কোণঠাসা করে রাখা যায়- শুধু সেই চিন্তায় মগ্ন। তিনি বলেন, জেলা কমিটিতে কারা স্থান পেয়েছেন সে তালিকা দেখলেই বুঝতে পারবেন দলের কার্যক্রম গতিশীল হবে কি-না? জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বলেন, নতুন কমিটি হওয়ার পর সাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রাণচাঞ্চল্য নেই বললেই চলে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দলের সভাপতি সম্পাদকসহ অধিকাংশই একই বলয়ের হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। কমিটিতে অনেকেই স্থান পেয়েছেন যারা কোনোদিনও দলীয় মিছিল মিটিংয়ে ছিলেন না। তারা দোকানদার কিংবা লন্ডন, আমেরিকা প্রবাসী। তাই অনেক সময় দলীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় কোরাম সংকটও দেখা দেয়। তার মতে, মহসীন আলী বলয়ের একটি বড় অংশকে বাইরে রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা করা সম্ভব নয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাধাপদ দেব সজলের মতে, আগের যেকোনো সময়ের চাইতে এখন জেলায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা।

জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যোগ্য নেতৃত্বে সুশৃঙ্খলভাবে দলীয় কার্যক্রম চলছে। দলে কোনো অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোই তার বাস্তব প্রমাণ। দলের সাংগঠনিক অবস্থা আরো গতিশীল করতে ৩টি উপজেলা ও ১টি পৌরসভায় সম্মেলন ও কাউন্সিলের জন্য বর্ধিত সভা করা হয়েছে। আগামীতে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো সক্রিয় এবং দৃশ্যমান হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিছবাহুর রহমানও বলেন, নতুন কমিটি হওয়ার পর দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা। এ পর্যন্ত ৪টি কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ও ২টি বর্ধিত সভা হয়েছে। উপস্থিতিও সরব ছিল। প্রত্যেকটি উপজেলা ও পৌর কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো ত্বরান্বিত করতে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশানুযায়ী খুব শিগগিরই সম্মেলন ও কাউন্সিল হবে। ইতিমধ্যেই সেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ১২ই অক্টোবর জুড়ী ও ১৩ই অক্টোবর শ্রীমঙ্গল উপজেলার সম্মেলন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা ভেদাভেদ নেই। যারা এগুলো ছড়াচ্ছে তা সঠিক নয়। জেলা আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপ বা বলয় নেই দাবি করে সাধারণ সম্পাদক বলেন, বড় দল তাই অনেকের কমিটিতে স্থান হয়নি, এটাই স্বাভাবিক। এতে সভাপতি সম্পাদককে দায়ী করা ঠিক নয়। প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকতে হলে মাঠে সক্রিয় হতে হয়। কাজ করতে হয়। তিনি জানান, প্রয়াত সৈয়দ মহসীন আলীর স্মরণসভায় গেল বছর তারা অংশ নিয়েছিলেন। এ বছর দাওয়াতই পাননি। তার মতে, এ নিয়ে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা ঠিক নয়।

মানবজমিন

আরও সংবাদ