স্বজনদের কাছে ফিরলো বিশ্বনাথের ফরিদের নিথর দেহ
স্বজনদের কোলে ফিরলেন নিথর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে উদ্ধার হওয়া ফরিদের মরদেহ সরকারি সহযোগিতায় দেশে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদের মরদেহ গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামে পৌঁছায়।এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় প্লেনযোগে মরদেহ সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। বিমানবন্দর থেকে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান।
নিহত ফরিদ আহমদ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামের শমসাদ আলীর ছেলে। মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয় স্বজন ও এলাকার লোকজন বাড়িতে গিয়ে ভিড় করেন এবং মরহুমের পরিবার-পরিজনদের শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
ফরিদের মরদেহ ফেরত আনতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরীকে নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কাছে ছুটে যান নিহতের স্বজনরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচেষ্ঠায় স্লোভাকিয়া থেকে ফরিদ আহমদের মরদেহ ফেরত আনা হয়।
পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদ ২০১৮ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ উপভোগ করতে রাশিয়া পাড়ি জমান। সেখান থেকে ভাগ্য বদলের আশায় দালালের মাধ্যমে ইউক্রেন হয়ে ফ্রান্স যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে পৌঁছান। স্লোভাকিয়ার গভীর জঙ্গলে অসুস্থ হয়ে পড়লে দালালরা তাকে রেখে অন্যদের নিয়ে ফ্রান্স চলে যায়।
ফরিদের সঙ্গীয়দের ভাষ্যমতে, দালালরা রাতের আধারে ফরিদকে তাদের থেকে আলাদা করে নেয়। এরপর তারা বিকট একটা শব্দ শুনতে পান। তাদের ধারণা দালালরা ফেলে যেতে পারছিল না, এ জন্য ফরিদকে মেরে ফেলেছে।
নিহতের ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন বলেন, ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স পৌঁছে দিতে দালালের সঙ্গে ৭ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন ফরিদ। চুক্তির টাকা দেশে মধ্যস্থ দালালের এজেন্টের কাছে জমা রাখেন তারা। ইউক্রেনে দালালের শিবিরে মাসখানেক রাখা হয় তাকে। সাতজনের দল ৫দিন হেঁটে স্লোভাকিয়া জঙ্গলে পৌঁছায়। সেখানে খাবার না পেয়ে ফরিদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দালালরা তাকে সেখানে রেখে অন্যদের ফ্রান্স পৌঁছায়।
তিনি বলেন, গত ২৭ আগস্ট পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন আমার ভাই। পরদিন (২৮ আগস্ট) তাদের দল ফ্রান্সের উদ্দেশে যাত্রা করবেন বলে তিনি জানিয়েছে ছিলেন। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
নিখোঁজের ১৬ দিনপর শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) স্লোভাকিয়ার জঙ্গল থেকে ফরিদের মরদেহ উদ্ধার করে সে দেশের পুলিশ। পরবর্তীতে নিহত ফরিদের চাচা আলকাছ আলী আওলাদ ও তার চাচাতো বোন যুক্তরাজ্য থেকে স্লোভাকিয়া পৌঁছে তার মরদেহ শনাক্ত করেন।
বাবা-মায়ের সাত সন্তানের মধ্যে ফরিদ সবার বড়। তিনি এমসি কলেজ থেকে রসায়নে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি নেন। প্রায় ৫ বছর আগে বিয়ে করেন ফরিদ। তার ইরা তাছিয়া নামে ৩ বছরের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।