৩৭ বছর পর বৃটিশ পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশন
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বৃটেনের বিচ্ছেদ বা ব্রেক্সিট নিয়ে ভবিষ্যৎ একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে চলতি মাসে বিশেষ অধিবেশনে বসবে বৃটিশ পার্লামেন্ট। ১৭ই অক্টোবর ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতাদের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর, ১৯শে অক্টোবর শনিবার এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। গত ৮০ বছরের ইতিহাসে বৃটিশ পার্লামেন্টে এমন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র চারটি। ইইউ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও। সেদিন তিনি ইইউ’র সঙ্গে কোনো চুক্তি নিশ্চিত করতে পারলে ওই বিশেষ অধিবেশনে সেটি পাসের প্রস্তাব তুলবেন। আর ইইউ সম্মেলনে কোনো চুক্তি না হলে বৃটেন বিকল্প কী পথ অনুসরণ করবে সে বিষয়ে আলোচনা হবে অধিবেশনটিতে। বিকল্প অপশন হিসেবে, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বা ব্রেক্সিটের সময়সীমা পেছানো বা ব্রেক্সিট স্থগিত করে দেয়াও বিবেচিত হতে পারে। প্রসঙ্গত, আগামী ৩১শে অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
তাই ১৭ই অক্টোবরের ইইউ সম্মেলনটিকে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি হওয়ার শেষ সুযোগ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এ খবর দিয়েছে বৃটিশ গণমাধ্যম।
খবরে বলা হয়, ব্রেক্সিট ইস্যু ইইউ’র সঙ্গে বৃটেনের স¤পর্ক নির্ধারণ করে দেবে। প্রায় অর্ধশতক জোটটির সদস্য থাকায় ইইউ’র সঙ্গে বৃটেনের বিচ্ছেদের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে দুই পক্ষের ওপরই। তবে বিশেষ করে বৃটেনের জন্য এটা হবে নতুন এক অধ্যায়ের শুরু। তাই ওই অধিবেশনটিকে বৃটেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণী অধিবেশন হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি নিজের প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নিতে ইইউ’কে রাজি করাতে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন জনসন। কিন্তু ইইউ দৃঢ়ভাবে তার চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। যার ফলে বেশ বিপাকে পড়েছেন জনসন। তিনি জানিয়েছেন, ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে ইইউ থেকে বৃটেনকে বের করে নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তিনি। প্রয়োজনে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতেও প্রস্তুত আছেন। কিন্তু বৃটিশ পার্লামেন্ট চুক্তিহীন ব্রেক্সিট রোধে চলতি মাসে ‘বেন অ্যাক্ট’ নামে একটি আইন পাস করেছে। ওই আইনের আওতায় ১৯শে অক্টোবরের মধ্যে বৃটিশ পার্লামেন্টে কোনো চুক্তি পাস না হলে বা চুক্তিহীন ব্রেক্সিটে সম্মত না হলে, ইইউ’র কাছে ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার সময়সীমা পেছানোর আবেদন করতে হবে জনসনকে।
নিজের প্রস্তাবে তার পূর্বসূরি তেরেসা মে’র প্রশাসনের প্রস্তাবিত ‘ব্যাকস্টপ’ পরিকল্পনার বিকল্প প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ব্রেক্সিট চুক্তির পর নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড (বৃটেনের অংশ) ও আয়ারল্যান্ড (ইইউ’র অংশ) এর মধ্যকার সীমান্ত বিষয়ক আইন নিয়েই ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা। দুই পক্ষের মধ্যে স্থলপথে সংযোগ দুই আয়ারল্যান্ডের মধ্যদিয়ে। বর্তমানে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ইইউ’র একক কাস্টমস ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় সীমান্ত পারাপারে কোনো কঠোর কাস্টমস তল্লাশির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না। কিন্তু চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে তেমনটা বন্ধ হয়ে যাবে। দুই দেশের মধ্যে স¤পর্ক স্বাভাবিক রাখতে তাই বিকল্প হিসেবে ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন মে। জনসন ওই ব্যাকস্টপের বদলে প্রস্তাব করেন, চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পর ২০২১ সাল পর্যন্ত ইইউ’র কাস্টমস ইউনিয়নের সদস্য থাকবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। ওই বছর বৃটেনের সঙ্গে ইইউ’র কাস্টমস ইউনিয়ন ত্যাগ করবে দেশটি। এরপর দেশটির পার্লামেন্ট চাইলে আরো চার বছরের জন্য ইইউ’র কাস্টমস ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার আবেদন করতে পারে। প্রতি চার বছর পরপর এই চুক্তি নবায়ন করতে হবে।
শনিবারে অধিবেশন
সাধারণত শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে বৃটিশ পার্লামেন্ট। এই দু’দিন কোনো অধিবেশন বসে না। তবে ব্যতিক্রমও ঘটেছে। ১৯৩৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বৃটিশ পার্লামেন্টের ইতিহাসে চারটি অধিবেশন শনিবারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম অধিবেশন হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর, ১৯৩৯ সালের ২রা সেপ্টেম্বর। আর সর্বশেষ অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮২ সালের ৩রা এপ্রিল। সে সময় বৃটিশ শাসনাধীন ফকল্যান্ড দ্বীপে সামরিক হামলা চালিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
এদিকে, ইইউ নেতারা আপাতদৃষ্টিতে জনসনের চুক্তি প্রত্যাখ্যান করলেও দুইপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। দুইপক্ষের প্রধান আলোচকরাই অপরপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।