২০ ডলার চার্জ নেবে পাকিস্তান, এতেই ক্ষুব্ধ ভারত!
পাকিস্তানে শিখ ধর্মাবলম্বীদের একটি তীর্থস্থান পরিদর্শনের জন্য মাথাপিছু ২০ ডলার চার্জ আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। আর এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। দিল্লির বক্তব্য, এই চার্জ গরিব তীর্থযাত্রীদের প্রতি অন্যায়। অথচ এখানে পাকিস্তান কোনও ‘নমনীয়তা’ দেখাতে রাজি হচ্ছে না।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এই ফি-কে প্রকারান্তরে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, এতে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বাড়বে। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কাউর পাল্টা অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তান এর মাধ্যমে গরিব মানুষের ‘ধর্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যবসা ফাঁদতে’ চাইছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না।
শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের শেষ জীবন কেটেছিল পাঞ্জাবের কর্তারপুরে। ১৯৪৭ সালেল দেশভাগের পর এখন এটি পড়েছে পাকিস্তানের নারোয়াল জেলাতে। সেই কর্তারপুরের দরবারা সাহিব গুরদোয়ারাতে যাতে ভারত থেকে শিখ তীর্থযাত্রীরা সহজে যেতে পারেন, সেই লক্ষ্যে দুই দেশ মিলে সীমান্ত পেরিয়ে একটি যাত্রাপথ স্থাপন করছে।
ভারতের গুরুদাসপুরে ডেরা বাবা নানক থেকে পাকিস্তানের কর্তারপুরে দরবারা সাহিব পর্যন্ত বিস্তৃত এই পথের নামকরণ করা হয়েছে ‘কর্তারপুর করিডোর’। গত বছর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঠিক পরপরই ইমরান খান এই করিডোর খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। তখনই তিনি জানান, ভারত-সহ সারা দুনিয়া থেকে আসা শিখদের জন্য এই তীর্থস্থান উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেখানে তাদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে পাকিস্তান প্রত্যেক তীর্থযাত্রীপিছু ২০ ডলার চার্জ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ায়।
সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকরা একে অন্যের দেশে গেলে সাধারণত কোনও ভিসা ফি নেওয়া হয় না। কিন্তু এখানে পাকিস্তান ভারতীয় নাগরিকদের এই ফি থেকে রেহাই দিতে রাজি হচ্ছে না। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কাউর বাদল বলেন, ২০ ডলার মানে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দেড় হাজার রুপি! তার মানে একজন গরিব মানুষ তার স্ত্রী বা বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে তীর্থ দর্শন করাতে গেলেও ছয় হাজার রুপি মতো বাড়তি খরচ! এতো টাকা তারা কোথায় পাবেন? আর এই টাকা দিয়ে অর্থনীতির উন্নয়ন?
ভারতীয় মন্ত্রী হরসিমরত কাউর বাদল-এর অভিযোগ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আমাদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে ধান্দা করতে চাইছেন।
কর্তারপুর করিডর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা এসসিএল দাস। তিনি বিবিসি-কে বলেন, এই ফি চার্জ করাটা তীর্থযাত্রার চেতনার পরিপন্থী এবং অত্যন্ত কুরুচিকর। তবে ইমরান খান তার ফেসবুক পোস্টে যুক্তি দিয়েছেন, ধর্মীয় পর্যটন তার দেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। আর এর মাধ্যমে নানা খাতে কর্মসংস্থানও সম্ভব।
বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও এসে এর আগে পাকিস্তানে বিভিন্ন বৌদ্ধ তীর্থস্থানে ঘুরে গেছেন। তারা নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছেন। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হয়েছে। এ বিষয়গুলোও মনে করিয়ে দিয়েছেন ইমরান খান।
কর্তারপুর করিডোর নিয়ে পাকিস্তান-ভারত আলোচনায় ইসলামাবাদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. মোহাম্মদ ফয়সল। মাস তিনেক আগেই তিনি মন্তব্য করেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আবহাওয়া বদলাচ্ছে। তবে গাছের ডালে এখনও নতুন পাতা আসতে কিছুটা বাকি আছে। তিনি তখন আরও দাবি করেছিলেন, ৮০ শতাংশ বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়ে গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো, তিন মাস পরেও গাছের ডালে নতুন পাতা আর এলো না। অর্থাৎ বাকি মতবিরোধ দুই দেশ এখনও মেটাতে পারলো না। এরই মধ্যে পাকিস্তান একতরফাভাবে ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ৯ নভেম্বর এই করিডোরের উদ্বোধন করা হবে। দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে ২০ ডলারের চার্জ। সূত্র: বিবিসি বাংলা।