সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন সউদী প্রবাসীরা

সউদী আরবে কর্মরত বহু প্রবাসী কর্মী কনস্যুলেটের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শত শত মাইল দূর থেকে জেদ্দাস্থ কনস্যুলেটে গিয়ে কর্মীরা যথাসময়ে নতুন পাসপোর্ট পাচ্ছে না। দেশটিতে কর্মরত মৃত প্রবাসী কর্মীদের লাশ দেশে পাঠাতে গড়িমসি করছে কনস্যুলেট কর্তৃপক্ষ। সউদী আরবের বিভিন্ন হাসপাতাল মর্গে দীর্ঘ দিন যাবত বেশ কিছু প্রবাসী কর্মীর লাশ পড়ে রয়েছে। একাধিক ভুক্তভোগি সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার দক্ষিণ কলাবাগান গ্রামের মো. শরীফ মিয়ার ছেলে হান্নান গত ২ সেপ্টেম্বর সউদী আরবের তাবুকে স্ট্রোক করে মারা যায়। মৃত হান্নানের স্ত্রী রুমা গতকাল কান্না জড়িত কন্ঠে ইনকিলাবকে বলেন, ২ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে কান্না কাটি করেও মৃত স্বামীর লাশ দেশে আনতে পারছি না। তিনি বলেন, জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের দ্বিতীয় সচিব সালাহ উদ্দিনের কাছে হান্নানের লাশ দেশে আনার জন্য সহায়তা কামনা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় সচিব কে এম সালাহ উদ্দিন জেদ্দাস্থ কনসাল জেনারেলের লিখিত অনুমতি ব্যতীত প্রতি মাসেই ৫/৭ দিন বিভিন্ন অঞ্চলে কনস্যুলার ট্যুরে গিয়ে ট্যুর ভাতা নিচ্ছেন।
প্রবাসী মোরশিদা নামক গৃহকর্মী দীর্ঘ আট মাস যাবত তার কফিল বেতন দিচ্ছে না। এমন অভিযোগ নিয়ে কনস্যুলেটের সচিব সালাহ উদ্দিনের কাছে সহযোগিতার জন্য গেলে তিনি মোরশিদাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। কোনো উপায় না দেশে অসহায় মোরশিদা এক সউদীর বাসায় আশ্রয় নিয়ে পালিলে পালিয়ে কাজ করছে। তায়েফ থেকে প্রবাসী জামান ব্যাপারী জানান, পারিবারিক সমস্যা নিয়ে কনস্যুলেটে গেলে সালাহ উদ্দিন তার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। নোয়াখালির নরসিংহপুর গ্রামের জালাল আহমাদের ছেলে তাবুকে প্রবাসী আবুল খালের স্ট্রোকে মারা গেলেও তার লাশ দেশে আনতে ৫ হাজার সউদী রিয়াল নেয়া হচ্ছে। জেদ্দাস্থ কনস্যুলেটের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রবাসী কর্মীদের লাশের খবর পেলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। মৃত আবুল খায়েরের ভাই আবুল বাশার জানান, জেদ্দাস্থ কনস্যুলেটের চরম উদাসিনতা ও গাফলতির দরুন তার ভায়ের লাশ আজো দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, সউদী আরবে মারা যাওয়ার তিন মাস পরে খুলনার আবিরন বেগমের লাশ গতকাল বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। আবিরনের পরিবার জানায়, সউদীতে দুই বছর নানাভাবে নির্যাতিত হয় আবিরন। গত ১৭ জুলাই গৃহকর্তার বাসায় মারা যান তিনি। মৃত্যুর ৫১ দিন পর খবর জানতে পারে তার পরিবার। পরে দূতাবাস ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে তার লাশ দেশে ফিরেছে।
সউদী থেকে দেয়া আবিরনের মৃত্যুসনদে মৃত্যুর কারণের জায়গায় লেখা আছে হত্যা। তবে সংশি¬ষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি ফাতেমা এমপ্লমেন্ট সার্ভিসেস (আরএল-১৩২১) পরিবারকে বলেছে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আবিরন। আবিরনের ছোট বোন রেশমা জানান, শুরুতে সউদী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে বাতিল করেছিলেন আবিরন বেগম। কিন্ত রিক্রুটিং এজেন্সি ফাতেমা এমপ¬য়মেন্ট সার্ভিসেসের চাপ ও হুমকির মুখে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সউদী যেতে বাধ্য হয় আবিরন।
সেখানে গিয়ে নিয়োগকর্তার নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাকে। সমস্যার কথা নিয়ে এজেন্সি ও দালালের কাছে গেলে তারা বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয় পরিবারকে। এজেন্সির হুমকির মুখে পরিবারও ছিল অসহায়। রেশমা বলেন, তার নিয়োগকর্তা আবিরনের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে তাকে মেরে ফেলেছে। এমনকি দুই বছরে কোনো বেতনও দেয়া হয়নি তাকে। মৃত্যুর পর তাদেরও খবর জানানো হয়নি বলে জানান রেশমা।
কেরাণীগঞ্জের রুহিতপুর নয়াপাড়ার মো.রতনের ছেলে প্রবাসী সউদীর তাবুকে মো. বাবুল মিয়া গত সেপ্টেম্বর মাসে মারা যায়। মৃত বাবুলের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার জানান, তার স্বামীর লাশ তাবুক জেনারেল হাসপাতালে পড়ে রয়েছে। কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা বাবুলের লাশ দেশে পাঠাতে গড়িমসি করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। লক্ষ্মীপুর জেলার চর জালিয়া গ্রামের ফজল হক গাজীর বিধব মেয়ে পারভীন আক্তার সউদীর তাবুকে এক সউদী নিয়োগকর্তার বাড়ীতে দুই মাস আগে আতœহত্যা করে মারা গেছে বলে জানা গেছে। মৃত পারভীনের বৃদ্ধ মা ছবিরন নেছা মেয়ের লাশ এক নজর দেখার জন্য রাত দিন কান্না কাটি করে দিন কাটাচ্ছেন। জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের অনুবাদক কাম আইন সহকারী আজিজ ফোরকান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, পারভীন আক্তার আতœহত্যা করেছে । এ মৃত্যর কারণ কতটুকু সত্য তা তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন না। এছাড়া মানিকগঞ্জের ফতেহপুর গ্রামের রুবেল হোসেনের স্ত্রী রোজিনা সউদীর তাবুকে কয়েক মাস আগে মারা গেছে। তার লাশ দেশে পাঠাতেও জেদ্দাস্থ কনস্যুলেট থেকে কোনো সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও সংবাদ