কোনো ফ্যাসিস্ট শক্তিকে এককভাবে পরাজিত করা যায় না: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, কোনো ফ্যাসিস্ট শক্তিকে এককভাবে পরাজিত করা যায় না। তাই দেশপ্রেমিক সব শক্তিকে এক জায়গায় আনতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই যাচ্ছি। আমরা মনে করি, সব দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে একনায়ক ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।
রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে শুক্রবার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস (৭ নভেম্বর) উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে বিএনপি।
সভার নির্ধারিত সময় বিকাল ৩টার আগেই নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে উপস্থিত হলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি না থাকায় তারা নাট্যমঞ্চের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। পরে অনুমতি পেলে বিকাল ৪টার দিকে নেতাকর্মীরা নাট্যমঞ্চ মিলনায়তনে প্রবেশ করেন। সাড়ে ৪টার দিকে সভা শুরু হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারে আছেন তারা বলেন, ৭ নভেম্বর মানি না। মানবেন কেন? দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না বলেই মানেন না। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে, যারা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়, তারা অবশ্য ৭ নভেম্বরকে মান্য করবে। কারণ ওইদিন ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়েছিলাম। সেদিন জনগণ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশপ্রেমিক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বের করে নিয়ে এসে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিল বলেই বাংলাদেশ অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি।
তিনি বলেন, এ সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। তারা রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে দিচ্ছে, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা মানুষকে সুশাসন থেকে বঞ্চিত করেছে। নিজেদের দুর্নীতি এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, তা ঢাকার জন্য চুনোপুঁটিগুলোকে ধরা হচ্ছে। একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, চুনোপুঁটি ধরে, ক্যাসিনোর গল্প বানিয়ে মহাদুর্নীতি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে পারবেন না।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছেন, তার হিসাব কোথায়? ব্যাংক, শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন, তার হিসাব কোথায়? হিসাব থাকবে না এজন্য যে, লুটের সঙ্গে জড়িত কেউ মন্ত্রী, কেউ উপদেষ্টা, আবার কেউ আপনজন।
তিনি বলেন, আমাদের পানি নিয়ে যায়, পানি দেয় না। সীমান্তে আমাদের লোকজন গুলি করে মারে তার হিসাব হয় না। সমুদ্রে রাডার বসিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে, আমার কি অবস্থা তা জানি না। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র বিপন্ন। এ অবস্থায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে যেতেই হবে। আসুন, সেই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাই। ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের হবেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দেশের উপর থেকে শুরু করে সর্বস্তরে পচন ধরেছে। দানব সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়াকে মুক্তি করা ছাড়া গণতন্ত্র আসবে না। আমি বিশ্বাস করি, রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটাতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারিনি, ব্যর্থ হয়েছি। ১ বছর ৯ মাস হয়ে গেছে তিনি কারাবন্দি। তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। আদালতের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তার জামিনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তি রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই হতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সময় এসে গেছে। আর বেশি সময় হাতে নেই। আমরা যদি দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দেই, আপনাদের রাজপথে নামতে হবে। আমরা যারা আছি তারা রাজপথে থাকব।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, শ্রমিক দলের অনোয়ার হোসেন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির মুন্সি বজলুল বাছিদ আঞ্জু প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, খায়রুল কবীর খোকন, ফজলুল হক মিলন, শিরিন সুলতানা, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।