অবশেষে বিদিশা, এরিক সাক্ষাৎ
“মা তুমি এসেছ, তুমি ছাড়া আমার কেউ নাই। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। ওরা আমাকে ঠিকমত খেতে দেয় না, গোসল করায় না। তুমি আমাকে একা ফেলে আর যেও না মা”।
অনেকদিন পরে মা বিদিশা এরশাদকে কাছে পেয়ে আনন্দে খুশিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে এরিক এরশাদ।
বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় মা ছেলের এমন আবেকঘন দৃশ্য ধরা পড়ে। অনেকদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে নেন বিদিশা। মা ছেলে দুজনই আনন্দে-কান্নায় বুক ভাসান। ছেলে এরিককে কাছে পেয়ে নিজ হাতে গোসল করান, নিজের রান্না করা পোলাও রোস্ট খাইয়ে দেন। মা ছেলে গল্পে মেতে উঠেন। শেয়ার করেন এতদিনের দুঃখ হাসি কান্না।
খবর নিয়ে জানা গেছে, এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় একা হয়ে পড়েছিলেন এরিক। চাচা জিএম কাদের এর তত্ত্বাবধানে বাসার লোকজন তার দেখাশেুনা করতেন। কিন্তু ঠিকমত তার দেখভাল করতেন না তারা। চাচা জিএম কাদেরকে বলা হলেও তিনিও ভাতিজার প্রতি অত কেয়ার করেননি। বৃহস্পতিবার এরশাদের গাড়ির ড্রাইভার এরিকের গায়ে হাত তুলেন। তাকে গালিগালাজ করে ধাক্কা মারেন। এসময় এরিক কাদতে কাদতে তার মা বিদিশাকে ফোন দেন। এখনই তার কাছে আসতে বলেন এরিক। ফোন পেয়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে পাগলের মত ছুটে আসেন বিদিশা। অনেকদিন পর মা ছেলের মিলন হয়। দুজনে অঝোরে কাঁদেন। এসময় এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়।
রাতে এরিকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বিদিশা এরশাদের মাধ্যমে তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবদকের।
কেমন আছেন জানতে চাইলে এরিক বলেন আল্লাহর রহমতে আমি এখন ভালো আছি। মাকে এতদিন পর ফিরে পেলেন কেমন লাগছে? এরিক বলেন- ভালো লাগছে, কেমন ভালো লাগছে তা বুঝাতে পারবো না।
এতদিন মার কাছ থেকে দূরে ছিলে কেমন ছিলে? জবাবে এরিক বলেন, মা বাবা ছাড়া অনেক কষ্ট। বাবা নেই, আমার তো এখন মা ছাড়া আপন আর কেউ নাই। যার মা নেই সেই বুঝে তার কি কষ্ট।
এরিক বলেন, এতদিন আমি কেঁদে কেঁদে মাকে খুজেছি। কতবার চাচাকে (জিএম কাদের) বলেছি, আমার মাকে এনে দাও। আমি মার কাছে চলে যাবো। কিন্তু চাচা এনে দেইনি।
কে মাকে দেখতে দেয়নি জানতে চাইলে এরিক বলেন, চাচারা। চাচা জিএম কাদের তাকে দেখতে দেয়নি। চাচা কেন? জবাবে বলেন, উনি ভাল জানেন। নিজের স্বার্থের জন্য আমাকে নিয়ে রাজনীতি আর কি।
চাচার উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে এরিক বলেন, তার রাজনীতির কারণে আমি মাকে কাছে পাইনি। নিজের স্বার্থের জন্য যদি আমার মতো অসহায়কে ব্যবহার করা হয় তাহলে এরমত লজ্জাজনক আর কি থাকতে পারে। মাকে দেখতে না দিয়ে চাচা মহাঅন্যায় করেছেন, এজন্য তার শাস্তি হওয়া দরকার বলে মনে করেন এরিক।
তিনি বলেন, আমি এখন থেকে মার কাছে থাকতে চাই। মা সঙ্গে থাকলে আমার আর কোন দুঃখ কষ্ট থাকবে না। কেউ আমাকে মারতে পারবে না।
ছেলেকে কাছে পেয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে বিদিশা এরশাদ বলেন, ছেলে এখন আমার বুকে, এর চাইতে একজন মায়ের সুখ শান্তি আর কি হতে পারে। সুখের এই অনুভুতি পুথিবীতে কোন কিছুর বিনিময়ে বুঝানো যাবে না। দুনিয়াতে সন্তানের চাইতে আপন কিছু আর নেই। এখন থেকে এরিক তার কাছে থাকবে বলেও জানান বিদিশা।
এতদিন যারা বাধা দিয়েছিল তারা আবার বাধা দেবে কিনা জবাবে বিদিশা বলেন, যারা মা ছেলের সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করছে আল্লাহ পাক তাদের সন্তান তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে।
তিনি বলেন, এতদিন আমার ছেলেকে তার চাচা দেখতে দেননি। এর চেয়ে অমানবিক কাজ আর কি হতে পারে। পিতৃহারা আমার ছেলে বাচাতে হলে মার বিকল্প নাই। বাবা মারা যাওয়ার পর যেভাবে ও অবহেলায়, না খেয়ে পড়ে ছিল, আর কিছুদিন হলে ও শেষ হয়ে যেতো। ঠিকমত খাওয়ানো হয় না, ৩/৪দিনেও গোসল নেই, গায়ে গন্ধ, যে অবস্থা ওর না দেখলে বিশ্বাস হবে না। আমি আমার ছেলেকে এভাবে অনাদরে অবহেলায় মরতে দিতে পরি না। এরিক আমার কাছে থাকবে। আমি ওকে পেয়ে হ্যাপি। কেউ আমার কাছ থেকে এরিককে কেড়ে নিতে পারবে না।