ফসল রক্ষায় দাড়িয়ে আছে কাকতাড়ুয়া!
দূর থেকে যে কেউ দেখলে মনে করবে দাড়ানো একজন লোক। হাত আছে, পা আছে, গায়ে আছে জামাও। কিন্তু কাছে গেলেই টের পাওয়া যাবে আসল রহস্য। দেখা যাবে মাটির হাড়িতে কাঁচা হাতে আকা চোখ, মুখ ও নাক যেটি ব্যবহৃত হয় মাথা হিসেবে। পুরো শরীরের আকার গঠন নিয়ে দাড়িয়ে আছে একজন সবল মানুষের মতো । নাম তার কাকতাড়ুয়া।
আবহমান গ্রাম বাংলায় ক্ষেতের ফসলকে পাখি, ইঁদুর, ফসল খেখো প্রণীর হাত থেকে রক্ষা করার কৌশল হিসেবে অদ্ভুত ও অভিনব পদ্ধতি। কৃষকরা যেটি আদিকাল থেকে এ পদ্ধতির সাথে মিলিত। গ্রাম বাংলার গ্রামীণ জনপদে ফসলের ক্ষেতের অতি পরিচিত দৃশ্য এই কাকতাড়ুয়া। বলা যায় কৃষকের ফসলি মাঠ রক্ষা করার জন্য দাড়িয়ে আছে একজন প্রহরী।
কালের প্রবাহে ফসল রক্ষার এই সনাতনী পদ্ধতিটি গ্রাম বাংলার বিমূর্ত প্রতীক হয়ে উঠে আসে গল্প, কবিতা, নাটক, সিনেমায়। এরপর কাকতাড়ুয়া আধুনিক সমাজে পৌছে যায় শিল্পীর চিত্রকর্মে বইয়ের প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে।
কাকতাড়ুয়া হচ্ছে কাক কিংবা অন্যান্য পশু-পাখিকে ভয় দেখানোর জন্য জমিতে রক্ষিত মানুষের প্রকৃতি বিশেষ। এর মাধ্যমে পশু-পাখি, ঈদুঁর ক্ষেতের ফসল নষ্ট করবে না। ফসল খেখো প্রণীর হাত থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়। ক্ষেতের ফসল ভালো হবে।
মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকদের ফসলে মাঠে দেখা যায়, ফসলি জমিতে পশু-পাখিকে তাড়ানোর জন্য এ কাকতাড়ুয়া জমির মাঝখানে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় মানুষ দাড়িয়ে আছে। এই কাকতাড়ুয়া দেখে ক্ষেতে পশু-পাখির উপদ্রব ঘটে না। ফলে ফসলও নষ্ট হয়না। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে জমিতে বেগুন, শসা, মরিছ, আলু, পেঁয়াজ, টমেটো ও সবজি জাতীয় ফসল রোপণ করা হয় তখনই এই কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করা হয়।
সরেজমি বিভিন্ন ফসলি মাঠ ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি লম্বাকৃতির বাশ বা কাঠের দন্ডের উপরের সমান্তরালে আড়াআড়ি করে আরেকটি বাশ বা কাঠ বাঁধা থাকে। এই আড়াআড়ি দন্ডটি এখানে হাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তারপর পুরোনো ছেড়া জামা বা পাঞ্জাবি কিংবা শার্ট-লুঙ্গি পরিয়ে দেওয়া হয়। এবং জামার ভেতর খঁড় বা ছন পেচিয়ে মোটাসোটা করা হয় । সাথে মাথা হিসেবে মাঠির হাড়িতে সাদা রং বা চুন দিয়ে চোখ, মুখ ও নাক অংকন করা হয়। যা দেখে ভয় পাবার মতো একটি ব্যাপার ঘটে। অবশেষে তৈরী হয় মানুষের আকৃতির কাকতাড়ুয়া। পুতে রাখা হয় ফসলি জমির মাঝখানে। কেউ আবার কৃষক দাড়িয়ে আছে বুঝতে এই কাকতাড়ুয়ার মাথায় ছাতা লাগিয়ে দেয়া হয়।
অনেকের বিশ্বাস কাকতাড়ুয়া বাড়ন্ত ফসলের দিকে পথচারির কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। প্রযুক্তির যুগে ফসল চাষাবাদের ধরণ পাল্টালেও ক্ষেতের ফসল রক্ষায় কৃষকরা সনাতন পদ্ধতির কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার পাল্টাননি। কৃষকের মাঠে যেন এক ঐতিহ্যের স্মারক এই কাকতাড়ুয়া।
কথা হয় জেলার জুড়ী উপজেলার বাছিরপুর এলাকার কৃষক ইসলাম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর বিভিন্ন প্রাণী ফসল ক্ষেতে আসে এবং এগুলো দেখে মানুষ মনে করে ফসলের মাঠ থেকে দূরে থাকে। এমনকি ফসলের মাঠে যাতে মানুষের কু নজর না পড়ে তাই এই কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করা হয়।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ