শিশির ভেজা ভোর নিয়ে এলো মাঘ

ছবিঃ সংগ্রহ

বিদায় নিল পৌষ। গাঢ় কুয়াশার অন্ধকারে ঢেকে শিশির ভেজা ভোর নিয়ে এলো মাঘ।

পৌষ এবং মাঘ এই দুই মাস মিলে শীতকাল। মাঘ বাংলা সনের দশম মাস। মাঘ মাসের শেষভাগে কখনো কখনো বৃষ্টি হয়ে থাকে। প্রবাদ আছে ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়।’

এখন প্রকৃতিতে মাঘের সে রূপটি পুরোপুরি দেখা যায়না। তবু মাঘের আবেদন বাঙালী জীবনে মোটেই ফেলনা নয়। কারণ, এ মাসটির সাথে বাঙালী সংস্কৃতির অনেক কিছুই জড়িয়ে।

‘মাঘের শীতে বাঘে পালায়’ কথাটি জানা নেই এমন বাঙালীর সংখ্যা খুবই কম। মাঘ মাসের পূর্ণিমাকে বলা হয় মাঘী পূর্ণিমা। খনার বচনে আছে, ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পূণ্যি দেশ।’ মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে উদযাপিত হয় সরস্বতী পূজা। ১১ মাঘ ব্রাহ্ম সমাজের মাঘোৎসব। আবার এ মাসেই আমের মুকুল আসে।

মাঘ মাসে নানা ফসলের প্রাচুর্য এবং নানানরকম খাওয়া-দাওয়ার ধুম পড়ে যায় গ্রামবাংলায়। শীতের পিঠা তৈরি হয় ঘরে ঘরে। মোরগ লড়াই, ষাঁড়ের লড়াই, মাছ-পাখি শিকার, বিয়ে শাদির জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান, আত্মীয়র বাড়ি বেড়ানো এই মাঘেই বেশি চলে। পুঁথি পাঠ, গম্ভীরা গান, যাত্রা, থিয়েটার, কবিগান ইত্যাদির আয়োজন চলে গ্রামগঞ্জে ও মফস্বলে। পানি অনেক কমে যায় বলে নদী-বিল-খাল-পুকুরে নানারকম মাছ ধরার কাজে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করেন। পুতুল নাচ, সার্কাস, যাত্রা, থিয়েটার উৎসবে মেতে থাকে শহর-গ্রাম। বলা যায়, মাঘ হয়ে ওঠে বাঙালির উৎসবের মাস।

মাঘের আগমণকে জানান দিয়েই বিদায় নেয় পৌষ। কারণ পৌষের শেষ দিন মানেই পৌষসংক্রান্তি। এই দিনটিও উৎসবের। কেবল গ্রামেই নয়, এই দিনে নানা আয়োজনে মেতে ওঠে পুরনো ঢাকাও। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়। ঘুড়ি ওড়ানো, আতশবাজি, পটকা ফোটানো এসব থাকে এ উৎসবে।

এ উৎসব সাকরাইন নামে উদযাপিত হয়। এবারও হয়েছে। পৌষ বিদায়ের দিনে গোটা পুরান ঢাকাই ছিল উৎসবে মুখর। গেণ্ডারিয়া তাঁতিবাজার লক্ষ্মীবাজার চকবাজার লালবাগ সূত্রাপুর এসব এলাকায় ঘুড়ি উড়ছিল শুধু। প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদে ছিল ছোট ছোট সমাবেশ।

মাঘ আরেকটি কারণেও কাঙ্ক্ষিত। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বারতা এই মাঘই জানিয়ে দেয় আমাদের। বলে দেয় আমি বিদায় নেয়ার সময় তোমাদের কাছে রেখে যাবো ফুলবসন্তের মাস ফাল্গুন। তাই মাঘ মাসকে স্বাগত।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ

আরও সংবাদ