সাংবাদিকের অনুভূতি ও স্বজন হারানোর বেদনা!

সারাদিন ছিলাম ওমানে নিহতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের পরিবারের সাথে কথা বলে নিউজ করতে।

টেলিভিশনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়তো সম্ভব হয়নি পরিবারগুলোর কষ্ঠের কথা।

লিয়াকতের প্যারালাইজড মায়ের আহাজারী দেখলে চোখের পানি ধরে রাখা যাবেনা, যায়নি। ছোট ছেলে সবার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সবুরের স্কুল পড়ুয়া মেয়ের কান্না থামছেইনা, স্ত্রী কেঁদে কেঁদে গলার স্বর চলে গেছে, মা অবিরত কাঁদছেন। জায়গা জমি কিছু নেই, থাকতেন শ‍্যালিকার বাড়ি।

আলমের বাড়িতে পৌঁছলে তার মেয়ের কথা রেকর্ড করতে গিয়ে বারবার সরে গিয়ে কেঁদেছি। মেয়েটি বারবার চিৎকার করে বলছে তার বাবা তাকে রেখে যেতে পারেননা, তার বাবার সাথে টেলিফোনে সে কথা বলবে। মা ও পাগলের মতো কাঁদছেন। জমিজমা কিছুই নেই ধারদেনা করে ৬ মাস হলো বিদেশ গেছেন। ৬ মাসের মধ্যেই সেখানে অবৈধ কর্মী হয়ে গেছেন। ধারগুলো শোধ করতে পারেননি, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি ছিলেন।

সব কাজ শেষ করে নিউজ রেডি করতে ফুটেজ কাটতে গিয়ে আবারও কান্না চলে আসে, যারা তখন ওখানে ছিলেন সবাই কেঁদেছেন। মৃত্যু চিরবাস্তব, তবে হঠাৎ মৃত্যু জীবনের সবকিছু তছনছ করে দিয়ে জীবনটাই পাল্টে দেয়। যার হারায় সেই বুঝে। সবগুলো পরিবারের দাবী লাশগুলো যেন দেশে আসে, প্রধানমন্ত্রী যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেন।

সারাদিন কষ্ট করে নিউজ পাঠানোর পর সবগুলো পরিবারের নিউজ অন ইয়ার হয়নি, যদিও টেলিভিশন সাংবাদিক হিসেবে আমি ছাড়া অন্য কেউ তিনটি বাড়িতে যাননি। কি আর করা মনের কষ্ট মনেই জমাট বাঁধলো। যদি সবগুলো পরিবারের কান্না কারো কানে পৌঁছাতো, তবে হয়তো সরকারের উর্ধ্বতন কোনও কর্মকর্তার নজরে আসতো।

আমরা যারা মফস্বলে কাজ করি তাদের অনেককিছুই সহ্য করতে হয়। মানুষ সংবাদকর্মীদের কাছে অনেককিছু আশা করে কিন্তু তার প্রতিফলন কতটা আমরা ফলাতে পারি? চোখে না দেখলে বাস্তবতা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন। অনেক কিছু লিখার ইচ্ছা ছিল, পারছিনা।পরিশেষে বলবো তিনটি পরিবারের তিনটি মরদেহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবেন সরকারের সংশ্লিষ্টমহল।

এরই মধ্যে সরকারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবৈধ থাকলে কিছু করার থাকেনা। অথচ তিন জনের মধ্যে আলমের পরিবার সবচেয়ে সমস্যাগ্রস্থ ও সে-ই সেখানে অবৈধ। দয়া করে কিছু একটা করুন, সবগুলো পরিবারের বুকফাটা কান্না যেন সহ্য করতে পারছিনা, আপনারাও দেখলে পারবেননা।

লেখকঃ এম এ হামিদ
সাংবাদিক, চ্যানেল ২৪ টেলিভিশন।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ

আরও সংবাদ