ড. ফয়জুর রহমান : ফেসবুকজুড়ে ধোঁয়াশা ও অন্তরালের সত্য

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকজুড়ে বর্তমানে ভাইরাল হয়েছেন সাদামাটা একজন ব্যক্তি। বইমেলার একটি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই ব্যক্তিকে নিয়ে চলছে আলোচনা। আফসানা ইভা নামের একজন নারী ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করেন এবং সঙ্গে কিছু কথা লেখেন। তার সেই পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় পুরো ফেসবুকে।

আফসানা তার পোস্টে লেখেন, ‘এই পোস্টটি দেওয়ার আশায় ছবিটি তোলা হয়নি কিন্তু বেশ কিছু অর্থবিত্তশালী ফেসবুক/ইউটিউব সেলিব্রেটিদের বইয়ের পাবলিসিটির পোস্ট দেখে দিতে ইচ্ছা হলো।

গতকাল বই মেলায় গিয়েছিলাম। সেখানেই এই লেখককে দেখি। উনি খুবই দ্রুত হাঁটছিলেন, এক দোকান থেকে অন্য দোকানে যাচ্ছিলেন আর নিজের বই দেখাচ্ছিলেন দোকানে রাখতে হয়তো বিক্রির জন্যে। আমি শুধু ওনার হাতে ব্যাগ ভর্তি বই আর ক্ষয়ে যাওয়া জুতোটাই খেয়াল করেছিলাম।

না বলে ছবিটা তোলা। ওনার সাথে কথা বলার আর ওনার বইটা দেখা উচিত ছিল। এখন যদিও আফসোস লাগছে সেজন্য।

কিন্তু একটা জিনিসই মাথায় ঘুরছিল, যতই প্রতিভাবান হন না কেন, আপনার অর্থবিত্ত না থাকলে হয়তো আপনার প্রতিভা চাপা পড়ে যাবে বস্তা পচা সো কল্ড প্রতিভাবান মানুষের ভিড়ে।’

এই লেখা ভাইরাল হওয়ার পরই ছবির ব্যক্তিটির খোঁজ শুরু হয়। কে তিনি? অনেকে তাকে আর্থিক সাহায্য করার ইচ্ছাও পোষণ করেন। জানা যায়, ভদ্রলোকের নাম ড. ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিকী। তিনি একজন স্কলার এবং অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বামী প্রয়াত ড. ওয়াজেদ সাহেবের সহকর্মী ছিলেন।

নুসরাত জাহান ইমা নামের একজন নারী ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে লেখেন, ‘আমার মামা উনি। উনি কিন্তু মোটেও গরীব নন। ওনার ছেলে সরকারি ডাক্তার এবং মেয়ে স্কুলের শিক্ষক। মামীও একজন ডাক্তার। মামা পিএইচডি করা ব্যক্তিত্ব। অত্যন্ত স্কলার ব্যক্তি। উনি সবসময় খুবই সাদামাটা থাকেন। এভাবেই চলেন। উনি উনার নিজের মতো করে চলেন। তার এই বই নিয়ে তিনি এভাবেই গত ৩/৪ বছর ধরে ঘোরেন। উনি কোনো বিজ্ঞাপন করতে চান না। ব্যস, সবাইকে তার কথা, তার বাণীটুকু পৌঁছে দিতে চান। তার ইচ্ছা, তার উদ্দেশ্য এটাই।’

ভাইরাল হওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে তানভীর আহমেদ সম্রাট নামের একজন ব্যক্তি ফেসবুকে লেখেন, ‘এই ভাইরাল হওয়া পোস্টটি যে ভদ্রলোককে নিয়ে করা হয়েছে তিনি আমার বড় কাকা! যারা পোস্টটি শেয়ার দিচ্ছেন তারা নিশ্চয়ই মহান উদ্দেশ্য নিয়েই শেয়ার করছেন তারপরেও আমি একটা ব্যাপার এখানে একটু পরিষ্কার করে দিতে চাই।

উনি ব্যক্তিগতভাবে খুবই সফল ও সচ্ছল মানুষ। উনার স্ত্রী অর্থাৎ আমার বড় কাকী বাংলাদেশের একজন নামকরা চিকিৎসক। উনার ছেলে একজন ডাক্তার এবং মেয়ের জামাই ব্রিগেডিয়ার।

আমার বড় কাকা ড. ফয়জুর রহমান কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে বাংলাদেশের আণবিক শক্তি কমিশনের ডিরেক্টর হিসেবে অবসরে গেছেন। কাকা পুরোপুরি একজন মাটির মানুষ। উনি ২৪ ঘণ্টা তার পড়াশুনা নিয়েই থাকেন, সমাজ নিয়ে, দেশ নিয়ে ভাবেন। তার বাসার ছাদে শত শত পাখি এসে আহার করে যায়!

উনি আমাদের সাধারণ মানুষদের মতো জামাকাপড় নিয়ে মাথা ঘামান না, যা হাতের কাছে পান সেটা পরেই অনেক সময় বেড়িয়ে পড়েন। বড় কাকার লেখা, ‘বাঙালির জয়, বাঙালির ব্যর্থতা’ একটা অসাধারণ গবেষণামূলক বই। আমাদের সবার এই বইটি কিনে পড়া উচিত অনেক অজানাকে জানার জন্য, জ্ঞান আহরণের জন্য।

উনি দেশকে ভালোবেসে, শুধু মানুষের কল্যাণের জন্য এই বই নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন, সমাজের ভালো করার উদ্দেশ্যে। মানুষ তার বই পড়ে অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে আসুক এই তার চাওয়া।’

১৯৩৪ সালে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার চরমধুচারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স এবং থিসিস গ্রুপে এম এসসি ডিগ্রি অর্জন ও পোস্ট এম এসসি গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।

এরপর নিউক্লীয় রসায়নের পিএইচডি. ডিগ্রি অর্জন করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তেহরানের নিউক্লীয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এবং সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল নিউক্লীয় চুল্লি গবেষণা ইনস্টিটিউট যথাক্রমে পোস্ট এম এসসি এবং পোস্ট ডক্টরাল গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন।

জ্ঞানী এই ব্যক্তি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব জার্মানি, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, গণচীন ও জাপানে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধীনে মেডিকেল এক্সামিনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ফয়জুর রহমান। পরবর্তী সময়ে পরমাণু শক্তি কমিশনের নিউক্লীয় শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ওপর দীর্ঘকাল গবেষণা করার পর ১৯৯২ সালে উক্ত সংস্থার নিউক্লীয় বিজ্ঞান ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি-এ রসায়ন শাস্ত্রের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।

একজন অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী নিজের বই হাতে হেঁটে চলছেন বইমেলার লাল ইটের পথে। অন্ধকার সরিয়ে আলো দেখানোর আশায় এগিয়ে চলছেন আপন শক্তিতে।

উল্লেখ্য, তার লেখা বইটির নাম ‘বাঙালির জয়, বাঙালির ব্যর্থতা’। বইমেলার প্যাভিলিয়ন ২ (পুথিনিলয়) এ পাওয়া যাবে বইটি।

(সংগৃহীত লেখাগুলোর ভাষা ও বানান কিছুটা সম্পাদিত)

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ

আরও সংবাদ