স্বামী-সন্তান কেউই তার খোঁজ নেননি!

টিন দিয়ে তৈরি করা এক চালা ছোট্ট ঘর। খোলা ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। এর কাছেই বড় পাকাঘর। কিন্তু ভাইয়ের সেই পাকাঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি হাবিবুন নেছার। তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় আবর্জনাযুক্ত ছোট্ট ঘরে। সেখানে তিনি রোদে পুড়েছেন। বৃষ্টিতে ভিজেছেন। শীতে কষ্ট করেছেন। খেয়ে না খেয়ে থেকেছেন দিনের পর দিন। স্বামী-সন্তান থাকলেও কেউ খোঁজ নেয়নি তার। এভাবে শেকলবন্দি অবস্থায় তার জীবনে কেটে গেছে ১৫ বছর।

এই ঘটনা শোনার পর হাবিবুন নেছাকে উদ্ধার করেছেন বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক। মঙ্গলবার রাতে তাকে উদ্ধার করতে সেখানে ছুটে যান তিনি। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালে হাবিবুন নেছার চিকিৎসা চলছে। তাকে দেখতে আসছেন অনেকে। দুর্বল শরীরে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না তিনি।

বড়লেখা উপজেলার জফরপুর গ্রামের মুহিবুর রহমানে স্ত্রী হাবিবুন নেছা (৬০)। বিয়ের পর সুখে চলছিল তাদের সংসার। তাদের ঘরে জন্ম হয় দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বিয়ের ৮-১০ বছর পর হাবিবুন নেছার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর স্বামী মুহিবুর রহমান আরেক বিয়ে করে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আলাদা সংসার শুরু করেন।

এরপর হাবিবুন নেছার একমাত্র বড় ভাই ইসলাম উদ্দিন তাকে বাড়িতে এনে দেখাশোনা শুরু করেন। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই আবার মানসিক সমস্যা দেখে দেয়। এতে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। যার কারণে তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। দীর্ঘদিন এভাবে জীবন কাটালেও হাবিবুন নেছার খোঁজখবর নেননি তার স্বামী। এমনকি, দুই ছেলে ও মেয়ে বড় হয়েও মায়ের খবর নেননি।

হাবিবুন নেছার বড় ভাই ইসলাম উদ্দিন বলেন, বিয়ের ৮-১০ বছরের মধ্যে হাবিবুন নেছার মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু তিনি সুস্থ হননি। স্বামী ও সন্তানরা তার খবর নেয় না।

তিনি জানান, হাবিবুন নেছার ছেলে নাজিম উদ্দিন ও আলাউদ্দিন বিয়ে করে সংসার করছেন। তাদের ফার্নিচারের ব্যবসা রয়েছে। তারা মায়ের খোঁজ নেয় না।

হাবিবুন নেছার বাঁধন খুলে দিলে তিনি অন্যদের মারধর করেন। উধাও হয়ে যান। এজন্য তাকে এভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে বলে জানান ইসলাম উদ্দিন।

বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, হাবিবুন নেছার স্বামী ও সন্তান রয়েছে। কিন্তু কেউ তার খোঁজ নেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ

আরও সংবাদ