করোনা আক্রান্ত সন্দেহে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরলেন সাংবাদিক!
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে সিলেটের শহীদ সামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীকে জড়িয়ে ধরে বিপাকে পড়েছেন সিলেটের এক চিত্র সাংবাদিক। চিকিৎসকরা তাকে ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একইসঙ্গে এমন কাণ্ডে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে।
সিলেটের কানাইঘাটের দুবাই ফেরত এক প্রবাসী অসুস্থতা নিয়ে বুধবার রাতে সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন এমন সন্দেহে রাতেই তাকে সিলেটের শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন করা হয়। ওইরাতেই সেই হাসপাতালে প্রবাসীর সাথে ফটো সাংবাদিক আজমল আলীর আলিঙ্গনরত একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই ছবির ব্যাপারে ফটো সাংবাদিক আজমল আলী বলেন, করোনাভাইরাস সন্দেহে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এমন খবর পেয়ে পেশাগত কাজে বুধবার রাতে হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি ওই রোগী কাঁদছেন। কিন্তু কোনো চিকিৎসক তার পাশে আসছেন না। এই দৃশ্য দেখে আবেগ সংবরণ করতে পারিনি। তাকে জড়িয়ে ধরি। সেখানে উপস্থিত কেউ একজন ছবিটি তুলে ফেসবুকে দিয়ে দেন।
আজমল আলী বলেন, এখন বুঝতে পারছি কাজটা ঠিক হয়নি। আজ (বৃহস্পতিবার) অনেক চিকিৎসক আমাকে ফোন দিয়েছেন। তারা সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। একইসঙ্গে কদিন বাড়ির বাইরে না বেরুতেও বলেছেন। তাদের কথামত আমি আজ সারাদিনই বাসায় ছিলাম।
এদিকে সন্দেহভাজন রোগীর সাথে আজমল আলীর এই ছবি ফেসবুকে রীতিমত ভাইরাল হয়ে গেছে। বেশিরভাগই তার এমন কাণ্ডের সমালোচনা করছেন। এরফলে নিজেসহ পুরো পরিবার ও আশপাশের মানুষজনকেও তিনি বিপদে ফেলতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। কীভাবে ওই ফটোসাংবাদিক ওই রোগীর এতোটা কাছাকাছি যেতে পারলেন এনিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। প্রশ্ন ওঠেছে হাসপাতালের নিরাপত্তা ও সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়ে।
এ ব্যাপারে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. শাকিল রহমান ফেসবুকে লিখেন- একজন ডাক্তার হিসেবে এখানে কিছু কথা না বললেই নয়। আজ কয়েকজনের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখলাম একজন সাংবাদিক ভাই সিলেট সদর হাসপাতালে করোনার সাইন সিম্পটম নিয়ে ভর্তি (পেশেন্ট দুবাইতে ছিলেন, ওখানে একটি হোটেলে কাজ করতেন এবং প্রচুর চাইনিজ লোক সেখানে আসা যাওয়া করতো) একজন রোগীকে দেখতে গিয়ে উনার পাশে বসে মাস্ক বা কোন সেফটি ছাড়াই ছবি তুলেছেন। এবং কয়েকজনের স্ট্যাটাসে লিখা দেখলাম এই রোগীকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
এখানে একটু ইনফরমেশন গ্যাপ আছে, সিলেট করোনাভাইরাসের লক্ষণ সহ কাউকে পাওয়া গেলে (সরকারিভাবে অর্ডার দেওয়া) তাকে কোন হাসপাতালে চিকিৎসা না করে সাথে সাথে সিলেট সদর হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য।
সরকারের আদেশ মতে ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহরে একটি নির্দিষ্ট হাসপাতালে করোনা কেয়ার ইউনিট নামে একটি আইসোলেশন সেন্টার শুরু করা হয়েছে। বুধবার ওই রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই যথেষ্ট সেফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ প্রতিনিয়তই সাসপেক্টড পেশেন্টকে দেখে যাচ্ছেন। এবং পেশেন্ট এর হিস্ট্রি ও সাইন – সিম্পটম দেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বিবেচনায় এই পেশেন্ট করোনার দিকে যায়।
তারপরও আজ আইসিআর এর একটি এক্সপার্ট প্রতিনিধি দল সকালে ঢাকা থেকে আসে রোগী দেখে ল্যাব ইনভেষ্টিগেশনের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত ও সোয়াব স্যাম্পল ঢাকা নিয়ে গেছেন। এই ইনভেষ্টিগেশনের রিপোর্ট আসতে দুদিন সময় লাগবে। তাই আপাতত আমরা সাধারণ জনগণ এই রোগীকে উৎসাহী হয়ে দেখা পরিহার করি। এই রোগী ভাইরাস আপনার শরীরে বাসা বাঁধলে অনেক সময় এই করোনার লক্ষণ ১৪ দিন পর আপনার শরীরে দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে আপনিও হাজার মানুষকে ইনফেকটেড করতে পারেন।
তাই আপনার, আমার একটি ভুলে আমাদের পরিবারসহ একটি নগর মৃত্যুপুরীতে পরিণত হতে পারে। সবাইকে সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ করছি।
এশিয়াবিডি/মুবিন/কামরান