দুলছে লিচুর সোনালি মুকুল

সবুজ আর হালকা লাল পাতার মুখে উঁকি মারছে লিচুর মুকুল। মৌমাছিরা ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মধু সংগ্রহে। গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থানের গাছে থোকায় থোকায় দুলছে লিচুর এ সোনালি মুকুল। এ বছর দিনাজপুরে ৬৫৪৬ হেক্টর জমিতে ৫৪১৮টি লিচুর বাগান করা হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, সোনারঙা নাকফুলের সেই মুকুল সুবাস ছড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসে। অল্পদিনের মধ্যে প্রতিটি গাছ ভরে যাবে ফুলে ফুলে। জেলার সবকটি উপজেলার প্রতিটি গ্রাম যেন লিচুর রাজ্যে পরিণত হতে যাচ্ছে। যে দিকে তাকাই সেদিকে গাছে গাছে শুধু দৃশ্যমান লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা।

বাংলার সৌন্দর্যের রাজা বলে পরিচিত গ্রীষ্মকাল। ফাগুনের ছোঁয়ায় পলাশ শিমুল বনে লেগেছে আগুন রাঙা ফুলের মেলা। রঙিন বনফুলে সমারোহ প্রকৃতি যেন সেজেছে বর্ণিল সাজে। মুকুলের ঘ্রাণে উপজেলাগুলোর সর্বত্র জানান দিচ্ছে বসন্তের ছোঁয়া। শোভা ছড়াচ্ছে নিজস্ব মহিমায়।

সরেজমিনে গিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর এলাকায় সফল লিচু চাষি তৌফিক রহমান ও তৌহিদুর রহমানের সাথে কথা হয়। তারা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পাঁচ বিঘা জমির উপরে আমাদের এই লিচু বাগান। বাগানে প্রায় ১৬৫টি চায়না থ্রী জাতের লিচু গাছ আছে। অনেক গাছে এখনো মুকুল আসেনি। তবে, কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিটি গাছে লিচুর মুকুল চলে আসবে। আমার বাগান থেকে গত বছর ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছিলাম। খরচ হয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে আয় হয়েছিল ২ লাখ টাকা। এ বছরও বাগানের পরিচর্যা ভালোভাবে করছি। মুকুলের মাথাগুলোকে পোকা-মাকড় যেন আক্রমণ করতে না পারে, তাই ওষুধ স্প্রে করছি। আশা করছি, গত বছরের চেয়ে এ বছর লিচুর ফলন ভালো হবে।’

ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার এখলাস হোসেন জানান, এবার উপজেলায় প্রায় ৫৩ হেক্টর জমিতে ১৬০টি বাগানে লিচুর চাষ করেছে লিচু চাষিরা।

নবাবগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এ বছরে অনেক নতুন লিচুর বাগান তৈরি হয়েছে। ২৭০ হেক্টর জমিতে ৩৫২টি বাগানে চাষিরা লিচু চাষ করেছে।’

এ দিকে হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শামীমা নাজনীন বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত লিচু বাগান পরিদর্শন করছি। লিচু বাগান মালিকদের সব ধরনের সেবাসহ সুপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এবার হাকিমপুর (হিলি) উপজেলায় ১৩ হেক্টর জমিতে প্রায় ১১০টি বাগানে লিচুর চাষ হচ্ছে।’

দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল জানান, চলতি মৌসুমে এবার জেলার ১৩টি উপজেলায় ৬৫৪৬ হেক্টর জমিতে ৫৪১৮টি বাগানে লিচুর চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর পুরো দিনাজপুর জেলায় অনেক নতুন লিচুর বাগান তৈরি হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিটি লিচুর গাছে মুকুল চলে আসবে।

‘প্রতিটি উপজেলার কৃষি অফিসাররা লিচু চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। আশা করছি, তারা পরামর্শ অনুযায়ী বাগানের পরিচর্যা করলে এবার লিচুর ভালো ফলন পাবে’, বলেন তিনি।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ

আরও সংবাদ