উন্মুক্ত হলো দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে
যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলো দেশের প্রথম দৃষ্টিনন্দন এক্সসেস কন্ট্রোল ননস্টপ এক্সপ্রেসওয়ে। এর ফলে ভ্রমণের পাশাপাশি খুব কম সময়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে যাতায়াতকারীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।
বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন এ এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সড়ক জোনে নির্মিত ২৫টি সেতু এবং তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ৬ লেনবিশিষ্ট ৮ কিলোমিটার তৃতীয় কর্ণফুলী (শাহ আমানত সেতু) সেতুর এপ্রোচ সড়ক উদ্বোধণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। এসময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম প্রকল্প বিষয়ে তথ্য চিত্র তুলে ধরেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০১৬ সালে এ এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয়।
প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আধুনিক ‘ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা’ সমৃদ্ধ ৬ লেনের এ মহাসড়কটিতে স্থানীয়দের ব্যবহারের জন্য থাকছে দুই লেনের সার্ভিস রোড। এছাড়াও রয়েছে ৪টি করে ফ্লাইওভার, রেলওয়ে ওভারব্রিজ, বড় ব্রিজ এবং ১৯টি আন্ডারপাসসহ বিশ্বমানের সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এক্সপ্রেসওয়েটিতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারবে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। সে হিসেবে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ২৭ থেকে ৩০ মিনিট।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এক্সপ্রেসওয়েটির ভাঙ্গা অংশ পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হলে পরিপূর্ণ সুফল পাবে এ পথে যাতায়াতকারী যাত্রীরা।
পদ্মা সেতু চালু হলে এ মহাসড়ক দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীসহ পুরো দেশের যে নিবিড় যোগাযোগ তৈরি হবে, তার অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক সুফল দেশকে এগিয়ে নেবে অনেকাংশেই। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে, ভাঙ্গা থেকে ঢাকা আসা এবং যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগবে না। যেখানে আগে প্রায় ৫ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হতো।
এ হাইওয়েতে আগামী ২০ বছরের জন্য ক্রমবর্ধমান ট্রাফিকের পরিমাণ বিবেচনা করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় ১১০০৩.৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি তৈরি করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে ২০১৬ সালে চারটি জেলা– ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর এবং ফরিদপুরে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করে এবং এটি নির্ধারিত সময়সীমার তিন মাস আগে নির্মাণ কাজ শেষ করে।
নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ২০২০ সালের ২০ জুন।
১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষ উদযাপন শুরুর প্রাক্কালে এক্সপ্রেসওয়ে ট্রাফিকের জন্য উন্মুক্ত হলো।
স্থানীয় ও ধীরগতির যানবাহনের জন্য এক্সপ্রেসওয়ের দু’পাশে দুটি পরিষেবা লেন রাখা হয়েছে যাতে দ্রুত যানবাহনগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় চলাচল করতে পারে এবং এইভাবে দীর্ঘপথের যাত্রীদের ভ্রমণের সময় কমে আসে।
এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ২.৩ কিলোমিটার কদমতলী-বাবুবাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার রয়েছে। অন্য চারটি ফ্লাইওভার হলো আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার এবং মালিগ্রামে।
৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে চারটি রেলওয়ে ওভারব্রিজ রয়েছে এবং চারটি বড় সেতু রয়েছে যার মধ্যে ৩৬৩ মিটার ধলেশ্বরী- ১, ৫৯১ মিটার ধলেশ্বরী- ২, ৪৬৬ মিটার আড়িয়াল খান এবং ১৩৬ মিটার কুমার সেতু।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ