পবিত্র কাবা শরীফ ও আমাদের ঈমানী দুর্বলতা
পবিত্র কাবা শরীফ হলো বরকত, হেদায়ত ও নিরাপদ স্থান।
সূরা আল-ইমরানের ৯৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّ ہُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡنَ.
নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য।
সূরা আনকাবুতের ৬৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّا جَعَلۡنَا حَرَمًا اٰمِنًا وَّیُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنۡ حَوۡلِہِمۡ ؕ اَفَبِالۡبَاطِلِ یُؤۡمِنُوۡنَ وَ بِنِعۡمَۃِ اللّٰہِ یَکۡفُرُوۡنَ.
তারা কি দেখে না যে, আমি ‘হারাম’ কে নিরাপদ বানিয়েছি, অথচ তাদের আশ পাশ থেকে মানুষদেরকে ছিনিয়ে নেয়া হয়? তাহলে কি তারা অসত্যেই বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?
সূরা বাকারার ১২৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
وَاِذۡ جَعَلۡنَا الۡبَیۡتَ مَثَابَۃً لِّلنَّاسِ وَ اَمۡنًا ؕ وَ اتَّخِذُوۡا مِنۡ مَّقَامِ اِبۡرٰہٖمَ مُصَلًّی ؕ وَ عَہِدۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰہٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ اَنۡ طَہِّرَا بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡعٰکِفِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ.
আর স্মরণ কর, যখন আমি কাবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং আদেশ দিলাম যে, তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর। আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকূকারী-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর।
সূরা আল-ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
فِیۡہِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰہِیۡمَ ۬ۚ وَ مَنۡ دَخَلَہٗ کَانَ اٰمِنًا ؕ وَ لِلّٰہِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡہِ سَبِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰہَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ.
তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহীম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।
উপরের কয়েকটি আয়াতে কারীমা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, পবিত্র কাবা শরীফ হচ্ছে মানুষের জন্য একটি বরকতময় ও হেদায়ত প্রাপ্তির স্থান। আর এই পবিত্র স্থানে যারা প্রবেশ করে তারা আল্লাহর রহমতে নিরাপত্তা লাভ করে। অজ্ঞতার যুগেও এই পবিত্র কাবা শরীফ নিরাপদ জায়গা হিসেবে গণ্য হতো।
পবিত্র কাবা শরীফের চতুষ্পার্শ্বে রয়েছে বরকতময় বহু নিদর্শন। মাকামে ইব্রাহিম, মুলতাজিম, হাজরে আসওয়াদ, মিজাবে রহমত, হাতিম, মাতাফ, রুকনে ইয়ামানিসহ প্রত্যেকটি বরকতের আধার। এগুলোর কাছে থেকে দোয়া করলে তা কবুল হয়। এ কারণেই পবিত্র কাবা শরীফের পানে মোমেন হৃদয় বারবার ছুটে যায়। এটি পবিত্র কাবা শরীফের বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যও বটে। আধুনিক দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম কোনো মনোরম দৃশ্য বা পর্যটনস্পট এক-দুবার পরিদর্শনেই মানব মন পরিতৃপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু শুষ্ক বালুকাময় মরু আরবের কাবাঘরে না আছে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট, না আছে চিত্তাকর্ষক কোনো বস্তু। তবুও সেখানে পৌঁছার আকুল আগ্রহ মোমেনের মনে ঢেউ খেলতে থাকে। সে আগ্রহে কখনো ভাটা পড়ে না।
তবে বর্তমান সময়ে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের গুনাহের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে উপদেশ বা শিক্ষা স্বরূপ আমাদের উপরে করোনা ভাইরাস নামে যে গজব এসেছে সেটা এই পবিত্র স্থান থেকেও আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে! আর তার একমাত্র কারণ হলো আমাদের ঈমানের দুর্বলতা। নতুবা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা শরীফ যেখানে যে কোন দোয়া করলে সরাসরি কবুল হয় সেখানে আমরা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি!
তবে অনেকেই বলবেন এটা বন্ধ করা হয়েছে ভালোর জন্য এবং রাসূল (সাঃ) এর বাণী অনুযায়ী সঠিক কাজ। তা অবশ্য ঠিক রাসূল (সাঃ) বলেছেন এই সমস্ত মহামারীর সময় যে যেখানে আছেন সেখানেই অবস্থান করবেন।
কিন্তু আমরা বাহির থেকে না গেলাম সবার ভালোর জন্য এবং রাসূল (সাঃ) এর কথা মানতে। কিন্তু রাসূল (সাঃ) কি বলেছেন পবিত্র মক্কা নগরীতে যারা আছে তারাও এই মহামারীর সময় পবিত্র কাবা শরীফের কাছে যাবে না? আশা করি এরকম কোন বাণী রাসূল (সাঃ) থেকে নেই।
তাহলে বর্তমানে পবিত্র কাবা শরীফের সম্মানীত ইমামগন সহ অসংখ্য ঈমানদার রয়েছেন যারা জানেন এই পবিত্র কাবা শরীফে গিয়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে। তাহলে উনারা কেন স্থানীয় লোকজন নিয়ে পবিত্র কাবা শরীফের তাওয়াফ করে আল্লাহর কাছে বিশ্ববাসীর জন্য এই সমস্ত মহামারী থেকে মুক্তি কামনা করছেন না? যেভাবে রাসূল (সাঃ) সাহাবীদের নিয়ে দোয়া করতেন যে কোন মসিবতের সময়।
সুতরাং এই সব কিছুর পরেও কি প্রমাণ হয় না সৌদীর বর্তমান সরকার আসলে মুসলিম জাতির সরকার নয়। তারা ইহুদি নাসারাদের পা চাটা গোলাম। তাই একটা সুযোগ পেয়ে মুসলমানদের পবিত্র কাবা শরীফে যাওয়া এবং তাওয়াফ করা থেকে বিরত রাখছে। তবে আমরা এটা বিশ্বস করি মানুষ তাওয়াফ না করলেও আল্লাহ কোন না কোন ভাবে তাঁর যে কোন সৃষ্টি দিয়ে পবিত্র কাবা শরীফের তাওয়াফ জারি রাখবেন। এবং ইতিমধ্যে তার প্রমাণও মিলেছে। আকাশের পাখির তাওয়াফ করা থেকে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে আল্লাহর পবিত্র ঘরের তাওয়াফ করার তৌফিক দান করুন। এবং তাঁর এই পবিত্র ঘরের অছিলায় আমাদের সবাইকে এই মহামারী থেকে মুক্তি দান করুন। (আল্লাহুম্মা আমিন)
লেখক: ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মাসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার , যুক্তরাজ্য
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান