ভয়ংকর কাজের বুয়া!
বাসা-বাড়িতে বুয়া নিয়োগের মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চক্র অভিনব কায়দায় চুরিসহ ভয়ংকর কাজ করে আসছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ইফতেখার আহমেদ।
রবিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এই চক্রের সাথে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- বিউটি বেগম ওরফে ময়না, খোরশেদ আলম ওরফে মোরশেদ, আশাদুল ইসলাম, রিপনা বেগম ও ফারুক আহম্মেদ। এ সময় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণের এক জোড়া হাতের চুড়ি, একটি লকেটসহ স্বর্ণের চেইন ও নগদ ৩০ হাজার টাকা, ছয়টি চেতনানাশক ট্যাবলেট ও ব্যবহৃত মোবাইলফোন জব্দ করা হয়।
ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ইফতেখার আহমেদ বলেন, গেন্ডারিয়া এলাকার গৃহবধূ ফয়জুন্নেছা বাসার দারোয়ানের মাধ্যমে ৯ মার্চ কাজের বুয়ার চাকরি নেয় ময়না নামে এক নারী। নিয়োগ পাওয়ার পর পরই গ্রেপ্তার আশাদুল ও তার স্ত্রী রিপনা বেগম চুরির উদ্দেশ্যে চেতনানাশক ওষুধ ময়নাকে সরবরাহ করেন। অভিনব কৌশলের অংশ হিসেবে কাজের বুয়া ময়না চেতনানাশক ওষুধ দুপুরের খাবারের সাথে মিশ্রিত করে ভিকটিম ও তার পরিবারের সদস্যদের খাইয়ে দেয়। ওষুধ খাওয়ার পর তারা সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তারা অচেতন হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আলমারিতে থাকা দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা ও ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, অজ্ঞান সবাইকে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের জবানবন্দি অনুযায়ী প্রথমে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া থেকে কাজের বুয়া ময়নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকিদেরও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
যেভাবে সংঘবদ্ধ হয় চক্রটি :
২০১৩ সালে একটি মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে খোরশেদ-ময়না ও আশাদুল-রিপনা নামের দুই দম্পতির পরিচয় হয়। তখন থেকেই তারা একসঙ্গে ঢাকা ও রাজশাহীতে এই কৌশলে স্ত্রীদের বাসায় কাজের বুয়া হিসেবে নিয়োগ দিয়ে চুরি করে আসছিল। ময়না বুয়া সেজে চুরি করে ধরা পড়ার সময়ের মধ্যে রিপনা-আশাদুল দম্পতি আরেক জায়গায় আরেকটি চুরির ঘটনা ঘটায়।
যাদের টার্গেট করা হয় :
তাদের টার্গেট পারসনদের মধ্যে বাসায় লোকসংখ্যা কম, শিক্ষিত ও সরল, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ কম এমন গৃহকর্তীদের বেছে নেয় এই চক্রটি।
বুয়া নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশের পরামর্শ :
বাসায় কাজের বুয়া নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য নেওয়াসহ বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। এর অংশ হিসেবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও বুয়ার বাড়ির নম্বর সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে বুয়ার আগের কর্মস্থলে খোঁজ নিতে হবে। আর বেশি সন্দেহজনক হলে পুলিশকে জানাতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৯ মার্চ রাজধানীর একটি বাসায় দারোয়ানের মাধ্যমে বুয়া হিসেবে কাজ নেন বিউটি বেগম ময়না। পরদিন দুপুরে ওই বাড়ির তিন সদস্যকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে নগদ দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা ও প্রায় ২৫ ভরি স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যায় ময়না। পরে গুরুতর অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পাঁচ দিন পর শনিবার (১৪ মার্চ) তাদের জ্ঞান ফেরে।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ

