করোনাভাইরাস এবং ঘরে নামাজ পড়ার বিতর্ক

করোনাভাইরাস জনিত কারণে বাংলাদেশ সরকারের জনৈক মন্ত্রী মসজিদে উপস্থিত না হয়ে ঘরে নামাজ পড়ার কথা বলেছেন। বিশ্বের আরও কয়েকটি মুসলিম দেশের ব্যাপারে একই খবর পড়লাম। কয়েকজন এই খবর পড়ে মনে কষ্ট পেয়েছেন। পাওয়াটা স্বাভাবিক, ঈমানের চাহিদা। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে, দুর্যোগময় মূহুর্তে ঘরে নামাজ পড়ার কথা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে নির্দেশিত। এটি সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনা এবং আমলের মধ্যেও পাওয়া যায়। তাই না জেনে বিষয়টিকে “ঈমানের কমজোরি” বলা নেহায়েত বিভ্রান্তিকর হবে। উল্লেখিত হাদিসের দিকে লক্ষ্য করুন-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّهُ قَالَ لِمُؤَذِّنِهِ فِي يَوْمٍ مَطِيرٍ إِذَا قُلْتَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فَلاَ تَقُلْ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ قُلْ صَلُّوا فِي بُيُوتِكُمْ قَالَ فَكَأَنَّ النَّاسَ اسْتَنْكَرُوا ذَاكَ فَقَالَ أَتَعْجَبُونَ مِنْ ذَا قَدْ فَعَلَ ذَا مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي إِنَّ الْجُمُعَةَ عَزْمَةٌ وَإِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أُحْرِجَكُمْ فَتَمْشُوا فِي الطِّينِ وَالدَّحْضِ
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি একদা ঝড়বৃষ্টির দিনে মুয়াজ্জিনকে বললেন, তুমি শাহাদাত পাঠ করার পর “হাইয়্যা আলাস সালাহ” (নামাজের দিকে এসো) না বলে “সাল্লু ফি বুয়ুতিকুম” (তোমরা তোমাদের ঘরে নামাজ আদায় করো) বলবে। তখন মানুষ ইতস্তত করতে লাগল। ইবনে আব্বাস রা. বললেন, তোমরা কি আমার কথায় অবাক হচ্ছো? আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ যিনি (রাসূল ﷺ) তিনিও এই কথা বলেছেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদিও জুম’আর নামাজ তোমাদের ওপর ফরয, কিন্তু আমি চাইনা যে, তোমরা কর্দমাক্ত পিচ্ছিল রাস্তা দিয়ে (মসজিদে) এসো।
[সহীহ বুখারী ; কিতাবুল জুম’আ, সহীহ মুসলিম ; কিতাবু সালাতিল মুসাফিরীন, সুনান আবি দাউদ ; কিতাবুস সালাত, সুনান ইবনে মাজাহ ; কিতাবু ইকামাতিস সালাত]

তবে সময় এবং এলাকার ভিন্নতার কারণে দুর্যোগের ধরণও ভিন্ন হয়। নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট এলাকায় দুর্যোগের ধরণ এবং বিস্তার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, দুর্যোগটি কতো বড়। করোনাভাইরাসের জন্য এখন থেকেই মসজিদে নামাজ বন্ধ করে দেয়া কতোটুকু যৌক্তিক, সেটি অবশ্যই প্রশ্নসাপেক্ষ। আল্লাহ না করুন, যদি কখনো পরিস্থিতি সেরকম খারাপ হয়ে যায়, তাহলে এ নির্দেশ দেয়া যেতে পারে। এটি হারাম কিছু নয়।

আশা করি বিষয়টি সবার বোধগম্য হবে।

মাওলানা মারজান আহমদ চৌধুরী ফুলতলি
বি,এ (অনার্স), এম,এ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 
ডিপ্লোমা ইন অ্যারাবিক, মিশর 

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

আরও সংবাদ